১২ই জুন, ২০২৫ তারিখে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার AI171 বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর দেশজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি সহ মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন, যার মধ্যে ১০ জন কেবিন ক্রু, ২ জন পাইলট এবং ২৩০ জন যাত্রী অন্তর্ভুক্ত। এই ভয়াবহতার মধ্যে, টাটা গ্রুপ নিহতদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেছে, যা কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে।
টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন এক বিবৃতিতে এই দুর্ঘটনার প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১-এর মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমাদের এই শোক কোনো ভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব নয়।” তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন যে টাটা গ্রুপ এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে থাকবে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, “টাটা গ্রুপ এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণ হারানো প্রতিটি ব্যক্তির পরিবারকে ১ কোটি টাকা দেবে।” এছাড়াও, আহতদের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় টাটা গ্রুপ বহন করবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সকল যত্ন ও সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, টাটা গ্রুপ বিজে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল নির্মাণেও সহায়তা করবে, যা এই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিমান ভ্রমণ আজকাল যতটা সুবিধাজনক, ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ। একটি সামান্য ভুলও ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সুবিধা প্রদানের জন্য বিমান সংস্থা এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA) কিছু কঠোর নিয়ম তৈরি করেছে। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিমানের জন্য এই নিয়মগুলো আলাদা।
১৯৯৯ সালের মন্ট্রিল কনভেনশন একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যেখানে ভারতও স্বাক্ষরকারী দেশ। আন্তর্জাতিক বিমানে মৃত্যু বা শারীরিক আঘাতের ক্ষেত্রে ভারতে পরিচালিত বিমান সংস্থাগুলো এই কনভেনশনের নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। এই কনভেনশনের অধীনে, প্রতিটি যাত্রীর জন্য প্রায় ১.৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় যে এই দুর্ঘটনা বিমান সংস্থার ভুলের কারণে ঘটেছে, তাহলে এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
যদিও মন্ট্রিল কনভেনশন প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিক বিমানের জন্য প্রযোজ্য, DGCA-এর নির্দেশিকা অনুসারে, ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলো অভ্যন্তরীণ (ডোমেস্টিক) বিমান চলাচলের ক্ষেত্রেও একই রকম কভারেজ দিতে পারে। এই ক্ষতিপূরণ সাধারণত বিমান সংস্থা এবং তাদের বিমা কোম্পানি দ্বারা পরিশোধ করা হয়।
অনেক বিমা কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য ভ্রমণ বিমা অফার করে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বিমা এবং ৫ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্থায়ী অক্ষমতা ক্ষতিপূরণ অন্তর্ভুক্ত থাকে। যদি কোনো যাত্রী ব্যক্তিগত ভ্রমণ বিমা নিয়ে থাকেন, তাহলে তার পরিবারও এই কভারেজের সুবিধা পাবে, যা বিমান সংস্থা প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের অতিরিক্ত হবে।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর, টাটা গ্রুপের এই তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা এবং প্রচলিত ক্ষতিপূরণ নিয়মাবলী কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ভবিষ্যৎ সংকটের মোকাবিলায় সাহায্য করবে। তবে, এই কঠিন সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা।