‘৯ বছর চাকরি কেড়ে নিলে অমানবিক সঙ্কট’! মানবিক কারণ দেখিয়ে কেন খারিজ হলো সিঙ্গল বেঞ্চের রায়?

কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খারিজ করে ২০১৬ সালের প্রাথমিকে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩২ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বহাল রাখল ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ে চরম স্বস্তি পেলেন হাজার হাজার শিক্ষক পরিবার। তবে মামলাকারীরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

প্রাথমিক নিয়োগ বাতিল করে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের যে রায় দিয়েছিলেন, বুধবার বিচারপতি চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ তার বিপরীত অবস্থান নিল।

রায় খারিজের মূল কারণ: ‘মানবিক’ দৃষ্টিকোণ ও দুর্নীতির প্রমাণ

ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে মূলত দুটি প্রধান যুক্তিতে নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ খারিজ করা হয়েছে:

১. প্রমাণ সাপেক্ষে বাতিল: ডিভিশন বেঞ্চের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, “সব চাকরি বাতিল করতে হলে আগে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই দুর্নীতি হয়েছে। কেবলমাত্র কয়েকজন ব্যর্থ প্রার্থীর (মামলাকারী) অভিযোগের ভিত্তিতেই গোটা নিয়োগ বাতিল হয়ে যায় না।” আদালত মনে করেছে, জমা দেওয়া তথ্য ‘সিস্টেমিক চক্রান্তের’ প্রমাণ দেয় না।

২. মানবিক কারণ: বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বলেন, “ন’বছর ধরে চাকরি করার পরে যদি কারও চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়, তা হলে তা তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের উপরে অমানবিক ও অপ্রতিরোধ্য সঙ্কট ডেকে আনবে। এই পরিস্থিতিতে এবং প্রভাবের তীব্রতা বিবেচনা করে এই আদালত ৩২ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রাখতে অনিচ্ছুক।”

এসএসসি ও প্রাথমিকের ‘পৃথক ফল’

অনেকের মতে, একই হাইকোর্টের ভিন্ন বেঞ্চ থেকে প্রায় একই ধরনের দুর্নীতি মামলায় দু’টি বিপরীতমুখী রায় এলো। এসএসসি-র প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল করার হাইকোর্টের রায় সুপ্রিম কোর্ট বহাল রেখেছিল, যেখানে দুই আদালতেরই পর্যবেক্ষণ ছিল— গোটা নিয়োগে ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’ হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক মামলায় ডিভিশন বেঞ্চ ভিন্ন পথে হেঁটেছে।

আদালতের কঠোর পর্যবেক্ষণ

সিঙ্গল বেঞ্চের যুক্তির সমালোচনা করে ডিভিশন বেঞ্চের কঠোর মন্তব্য:

“আদালত কোনও ভাবেই স্বাধীনচেতা মধ্যযুগের নাইটদের মতো অ্যাডভেঞ্চার প্রবণ হয়ে নিজের সৌন্দর্য, ভুল বা সৎ-আদর্শের খোঁজে হেলমেট পরে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াতে পারেন না। সর্বদা আদালতের প্রত্যাশা থাকে যে, তারা স্বীকৃত ও পবিত্র নীতিমালা থেকেই প্রেরণা গ্রহণ করবে।”

সিবিআই তদন্তে ২৬৪ জন অবৈধ গ্রেস মার্ক প্রাপক ও ৯৬ জন ‘অযোগ্য’ প্রার্থীর নাম উঠে এলেও আদালত মনে করেছে, শুধুমাত্র ফৌজদারি মামলা চলছে— এই যুক্তিতে নিয়োগ বাতিল করা যায় না। মামলাকারীরা এখন এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy