এক সময়ে যেখানে ন্যায়বিচারের আশায় মানুষ দিনের পর দিন আদালতের চক্কর কাটাতো, সেখানে আধুনিক বিচারব্যবস্থা দ্রুত রায় প্রদানের মাধ্যমে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদে সম্প্রতি এমনই এক দৃষ্টান্তমূলক রায় প্রদান করা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত মাসে আট বছর বয়সী এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় এখানকার একটি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত বুধবার (৩০শে জুলাই, ২০২৫) দোষী কৌশলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। বিশেষ বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) মুমতাজ আলি তাঁর রায়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, অপরাধীকে তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে।
সহযোগীদেরও কঠিন শাস্তি:
এই মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে, বিশেষ বিচারক অপরাধী কৌশলের বাবা অর্জুন সিং, মা রাধা এবং ভাই মনীশকেও দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তাঁদের প্রত্যেককে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা এই জঘন্য অপরাধে সহযোগিতার জন্য একটি কঠোর বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনার বিবরণ:
গত ১৮ই জুন নারখি থানা এলাকার একটি গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। নির্যাতিতা শিশুকন্যা তার ঠাকুরমার বাড়িতে গিয়েছিল। সেই সময় কৌশল তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে সে নাবালিকা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিশঙ্কর প্রসাদ বৃহস্পতিবার জানান, ধর্ষণ করার পর কৌশল মেয়েটিকে হত্যা করে এবং তার দেহ ইটের নিচে পুঁতে রাখে।
ভুক্তভোগীর পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে কৌশল, অর্জুন, রাধা এবং মনীশের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং পকসো আইনে মামলা দায়ের করে। পুলিশ দ্রুত মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্ত স্থাপন:
এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া মাত্র ২৫ দিন ধরে চলে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে আদালতে ৯ জন সাক্ষী এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। পুলিশের তৎপরতা এবং আদালতের দ্রুত শুনানির কারণেই এত অল্প সময়ের মধ্যে এই মামলার রায় দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই ধরনের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক রায়, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। এটি প্রমাণ করে যে, জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে বিচার পেতে দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটছে।