হৃদরোগের জটিল চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল অশোকনগরের ১৬ বছর বয়সী প্রিন্স সেন চৌধুরী। কিন্তু হার্ট প্রতিস্থাপনের আগেই গত ১ অগাস্ট তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসার জন্য মোট ২২ লক্ষ টাকা খরচ হলেও, প্রিন্সের পরিবারের পক্ষে বকেয়া ৭ লক্ষ টাকা মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। এই বকেয়া টাকার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৭২ ঘণ্টা ধরে প্রিন্সের দেহ আটকে রেখেছিল। অবশেষে স্থানীয় বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর হস্তক্ষেপে সোমবার কফিনবন্দি অবস্থায় প্রিন্সের মরদেহ তার অশোকনগরের বাড়িতে ফিরে আসে।
অশোকনগর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রিন্স সেন চৌধুরী এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। তার বাবা প্রশান্ত সেন চৌধুরী অনলাইন শেয়ার মার্কেটিংয়ের ব্যবসা করেন। কোভিডের পর থেকেই প্রিন্স হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। কলকাতায় চিকিৎসা করানোর পর তাকে আরও ভালো চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবার আশা করেছিল যে হার্ট প্রতিস্থাপনের পর সে সুস্থ হয়ে ফিরবে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই প্রিন্স মারা যায়।
চিকিৎসার ২২ লক্ষ টাকার মধ্যে প্রিন্সের পরিবার ১৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছিল। কিন্তু বাকি ৭ লক্ষ টাকা মেটানোর সামর্থ্য তাদের ছিল না। এই কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রিন্সের দেহ ছাড়তে অস্বীকার করে। নিরুপায় হয়ে বাবা প্রশান্ত সেন চৌধুরী অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিধায়কের তৎপরতায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর অবশেষে সোমবার প্রিন্সের দেহ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
সোমবার সকালে প্রিন্সের কফিনবন্দি দেহ বাড়িতে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রিয় ছাত্রকে শেষবার দেখতে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ এবং অন্যান্য শিক্ষকরা ছুটে আসেন। প্রিন্সের বাবা প্রশান্ত সেন চৌধুরী বলেন, “আমি কোনো রকমে ১৫ লক্ষ টাকা দিতে পেরেছিলাম, বাকি টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার ছিল না। বিধায়ক উদ্যোগ নেওয়ায় আমি ছেলের দেহ পেয়েছি।”
বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “৭ লক্ষ টাকার জন্য ওই নামী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ পরিবারকে দিতে চাইছিল না। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেহটি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছি।” এই ঘটনায় স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।