বয়স এবং ত্রুটিপূর্ণ জীবনশৈলীর কারণে বিশ্বজুড়ে গর্ভাবস্থায় ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার গত এক দশকে মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, প্রতি ছ’জন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে একজন পুরোনো বা গর্ভাবস্থাকালীন (জেস্টেশনাল) ডায়াবিটিসে ভুগছেন। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অন্তঃসত্ত্বাদের ডায়াবিটিস ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি বিস্তারিত আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন প্রকাশ করেছে।
WHO-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে বছরে প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ মহিলা গর্ভাবস্থায় ডায়াবিটিসে ভুগছেন, যাদের বড় অংশই যথাযথ চিকিৎসা পান না। ভারতে এই হার আরও ভয়াবহ; অন্তত ১৩% অন্তঃসত্ত্বা জেস্টেশনাল ডায়াবিটিসে আক্রান্ত।
মেটফর্মিন ব্যবহারে স্পষ্ট সুপারিশ
নতুন এই নির্দেশিকায় টাইপ-২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলা এবং জেস্টেশনাল ডায়াবিটিসে ভোগা মহিলাদের চিকিৎসায় মেটফর্মিন ব্যবহারের স্পষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। যদি জীবনশৈলী বা খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে প্রত্যাশিত ফল না মেলে, তবে অ্যান্টি-ডায়াবিটিক ওষুধ হিসেবে মেটফর্মিন দিতে হবে। সুগার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলে দেরি না করে ইনসুলিন যোগ করে কম্বিনেশন থেরাপি শুরু করার কথাও জানানো হয়েছে। জেস্টেশনাল ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রেও প্রথমে মেটফর্মিন এবং পরে মেটফর্মিন-ইনসুলিন কম্বিনেশন ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
ঝুঁকি এড়াতে রোডম্যাপ
গর্ভাবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস মা ও শিশু উভয়ের জন্যই মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— মায়ের প্রি-এক্ল্যামশিয়া (উচ্চ রক্তচাপ), গর্ভপাত, মৃত শিশু প্রসব, সদ্যোজাতের অতিরিক্ত ওজন (৪ কেজির বেশি), এবং নবজাতকের রক্তে শর্করা কমে যাওয়া। এছাড়াও, ভবিষ্যতে মা ও শিশুর টাইপ-২ ডায়াবিটিস এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকিও বাড়ে।
WHO-এর নতুন রোডম্যাপে জোর দেওয়া হয়েছে:
-
ব্যক্তিনির্ভর ফুড প্ল্যান।
-
বাস্তবসম্মত ব্লাডসুগার টার্গেট ও ঘন ঘন মনিটরিং।
-
প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, এন্ডোক্রিনোলজি বিশেষজ্ঞ এবং পুষ্টিবিদের সমন্বয়ে গঠিত ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল।
প্রসবের পরেও ডায়াবিটিস: উদ্বেগে চিকিৎসকরা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস সাধারণত প্রসবের পরে সেরে যায়। তবে সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বলছে, জেস্টেশনাল ডায়াবিটিসে আক্রান্ত প্রসূতিদের মধ্যে অন্তত ৩০% মহিলার ডায়াবিটিস প্রসবের পরেও থেকে যাচ্ছে, যা পরে টাইপ-২ ডায়াবিটিসে রূপান্তরিত হচ্ছে। ভারতে ৯ কোটিরও বেশি মানুষ টাইপ-২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ায় WHO-এর এই গাইডলাইনকে চিকিৎসকরা স্বাগত জানিয়েছেন।
বেঙ্গল অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নেকোলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি বাসব মুখোপাধ্যায় বলেন, “WHO-এর এই গাইডলাইন ফ্রন্টলাইন ডাক্তারদের খুব সাহায্য করবে এবং চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ মানুষ— সবার সচেতনতা বাড়াবে।”