৫ নয়, ৬ অভিযুক্তের খোঁজে পুলিশ! বন্ধুর ‘সন্দেহজনক ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন, কীভাবে ধরা পড়ল নির্যাতিতারই বন্ধু?

পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে মেডিকেল ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ব্যক্তি হলেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বন্ধু ওয়াসিফ আলি। তার প্রাথমিক বয়ান এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দেওয়া ১৬৪ ধারার বয়ানে অসঙ্গতি (Inconsistencies) থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে এই ঘটনায় চারজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল— আপু বাউরি, শেখ ফিরদৌস, শেখ রিয়াজুদ্দিন এবং শেখ নাসিরুদ্দিন। ওয়াসীফ আলির গ্রেফতারের পর মোট ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫।

পুলিশের দাবি, ৫ জনই জড়িত
আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা ৫ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছি, যাদের ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্তদের ছিনিয়ে নেওয়া একটি মোবাইল ফোনও আমরা উদ্ধার করেছি।”

তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং নির্যাতিতা মেয়েটির বয়ানের ভিত্তিতে জানতে পেরেছে যে, অভিযুক্তদের মধ্যে কেবল একজনই মেয়েটির সঙ্গে ধর্ষণ করেছে। তবে এই ৫ জনেরই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। নির্যাতিতা মেয়েটির যে বন্ধু ওই ৫ অভিযুক্ত ছাড়াও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল (ওয়াসিফ আলি), তার ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।

নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ
নির্যাতিতার বাবা জানান, তাঁর মেয়ের বন্ধুরা রাত প্রায় ৯:৩০টার দিকে তাঁকে ফোন করেছিল। বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার সময় ২৩ বছর বয়সী এই ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। অভিযুক্তরা চিৎকার করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ, অভিযুক্তরা তাঁর মেয়ের মোবাইল ফোন ও সঙ্গে থাকা ২০০ টাকাও ছিনিয়ে নিয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “মেডিকেল কলেজে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, নির্যাতিতা এবং তার বন্ধু সন্ধ্যা ৭টা ৫৪ মিনিট নাগাদ ক্যাম্পাস থেকে বের হচ্ছে। রাত প্রায় ৮টা ৪২ মিনিটে বন্ধুটি একাই ফিরে আসে এবং ঘোরাঘুরি করতে থাকে। সে আবার রাত ৮টা ৪৮ মিনিটে চলে যায় এবং রাত ৯টা ৩০ মিনিট নাগাদ নির্যাতিতাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বললেন?
এই ঘটনা প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলায় জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে, আমরা এখানে এটি একেবারেই বরদাস্ত করি না।” পাশাপাশি তিনি বাইরে থেকে এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ করেন, “তারা যেন রাতে বাইরে না যায়।”

তিনি বলেন, “বেসরকারি কলেজগুলোরও একটি দায়িত্ব থাকে যে তারা যেন শিক্ষার্থীদের খেয়াল রাখে। ঘটনাটি নিন্দনীয়। কিন্তু যারা হোস্টেলে থাকে, তাদেরও একটি ব্যবস্থা (সিস্টেম) থাকে। আমি পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কাউকে রেয়াত করা হবে না।”

আসল ঘটনা
ওডিশার বালেশ্বরের বাসিন্দা এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রীটির সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা নাগাদ হাসপাতাল ভবনের পিছনে ধর্ষণ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এক ব্যক্তি তাকে একটি জনশূন্য জায়গায় টেনে নিয়ে যায়, যেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়। দ্রুত তাকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তার ওপর নজরদারি রাখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে তার ব্যাগ, জুতো এবং জামাকাপড় সহ ব্যক্তিগত জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy