কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমারের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে স্বস্তি পেলেন ২০১৬ সালে নিযুক্ত ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ করে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এই নিয়োগে কোনো দুর্নীতি নেই এবং মানবিকতার দিক বিবেচনা করে ৯ বছর পর চাকরি বাতিল করা উচিত নয়। তবে এই রায় ঘিরে ক্ষোভে ফুঁসছে বিরোধী শিবির।
বিজেপি নেতা ও আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি এই রায়ের তীব্র সমালোচনা করে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে সরব হয়েছেন। তাঁর মতে:
“আজকের রায়ের পরে পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার বেকার যুবকের মনে নতুন প্রশ্ন উঠবে। যারা প্রকৃত যোগ্য হয়েও চাকরি পায়নি, তাদের পরিবারের কি কোনও মূল্য নেই? মানবিকতা আর বিচার এক জিনিস নয় সরকার সেই পার্থক্যটাই আড়াল করছে।”
তরুণজ্যোতির কথায়, এই রায় দুর্নীতিকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা’ এনে দিল।
রায় খারিজের মূল কারণ:
ডিভিশন বেঞ্চ তাদের পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট করে জানায়, “কর্তৃপক্ষের ভুল বা দুর্নীতির দায় নিরীহ চাকরিপ্রাপ্তদের ওপর চাপানো যায় না। ৯ বছর পর চাকরি বাতিল করলে পরিবারগুলোর মাথায় আঘাত নেমে আসবে এটা মানবিক দিক থেকে সমর্থনযোগ্য নয়।”
তবে বেঞ্চ এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত আগের মতোই চলবে। রিজার্ভেশনসহ অন্যান্য অনিয়ম নিয়ে যে মামলাগুলি সিঙ্গল বেঞ্চে চলছে, সেগুলোও চলবে। অর্থাৎ, চাকরি আপাতত বহাল থাকলেও আইনি বিচার শেষ হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি:
তরুণজ্যোতি তিওয়ারি এই রায়কে বিচারিক ধারার বিরুদ্ধে বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অসংখ্য রায়ে—ত্রিপুরা চাকরি বাতিল মামলা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক এসএসসি মামলাতেও—দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগ বাতিলের নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট।
তিনি হুঙ্কার দেন:
“আদালতের রায় মান্য। কিন্তু লড়াই থামবে না। শেষ কথা সুপ্রিম কোর্ট বলবে। এই লড়াই কারও ব্যক্তিগত নয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে।”
বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, যাদের উত্তরপত্রে হেরফের, ওএমআর ঘষামাজা, বেআইনি ইন্টারভিউ স্কোরের প্রমাণ আদালতে জমা রয়েছে, তাদের কথা বিচার করা হয়নি। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার এই রায়কে “বিচারের জয় ও মানুষের জয়” বলে ব্যাখ্যা করেছে।