ভারতে শিক্ষার ঐতিহ্য কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন। বৈদিক যুগ থেকেই এ দেশে জ্ঞানচর্চার নানা রূপ বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে। তবে আজ আমরা যেভাবে চার দেওয়ালের মাঝে, ব্ল্যাকবোর্ড ও বেঞ্চের ঘেরাটোপে ‘প্রথাগত’ বা ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ স্কুল শিক্ষা দেখি, তার সূচনা হয়েছিল ৩১০ বছর আগে। ১৭১৫ সালে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম আধুনিক স্কুল, যা আজও সগৌরবে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে।
তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে (তৎকালীন মাদ্রাজ) অবস্থিত এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সেন্ট জর্জেস অ্যাংলো ইন্ডিয়ান হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল’। লাল রঙের এই বিশালাকার স্কুল ভবনটিতে ব্রিটিশ স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভারতে শ্রেণিকক্ষে বসে ছাত্র শিক্ষার যে প্রথা আজ সর্বজনীন, তার পথপ্রদর্শক ছিল এই স্কুলটিই। ১৭১৫ সাল থেকে শুরু করে পরাধীন ভারত এবং স্বাধীনতার পরবর্তী দীর্ঘ সময়— কোনো বাধাই এই স্কুলের শিক্ষা প্রক্রিয়াকে থামাতে পারেনি। এটি কেবল ভারতের সবচেয়ে পুরনো স্কুলই নয়, বরং বিশ্বের প্রাচীনতম স্কুলগুলোর মধ্যেও অন্যতম।
এই স্কুলটি মূলত ইউরোপীয় এবং ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার এক অনন্য মেলবন্ধন। বর্তমানে এখানে নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কয়েক হাজার ছাত্র পড়াশোনা করে। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার এক অদ্ভুত সহাবস্থান এখানে লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি ক্লাসরুম যেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাংলার শিক্ষাক্ষেত্রেও একাধিক প্রাচীন প্রতিষ্ঠানের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, তবে চেন্নাইয়ের এই স্কুলের অনেক পরে সেগুলোর পথ চলা শুরু হয়। যেমন, কলকাতার খ্যাতনামা হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৭ সালে। তার ঠিক ১৩ বছর পর ১৮৩০ সালে পথ চলা শুরু করে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল। আবার নারী শিক্ষার ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকা বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের সূচনা হয় ১৮৪৯ সালে। বাংলা তথা ভারতের এই সব প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আজও আমাদের দেশের জ্ঞানচর্চার ভিতকে মজবুত করে রেখেছে। তবে সেই সব কিছুর শুরুটা হয়েছিল ৩১০ বছর আগে মাদ্রাজের সেই লাল বাড়ি থেকেই।