মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দুর্গাপূজা কমিটিগুলির বৈঠক মানেই সবার নজর থাকে অনুদানের অঙ্কের দিকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২০১৮ সালে ১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হওয়া অনুদান বর্তমানে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে, যা প্রায় ৯০০ শতাংশ বৃদ্ধি। এর ফলে সরকারি খরচও এক লাফে ১০০ কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।
প্রতি বছরই দুর্গাপূজা কমিটিগুলিকে রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুদান বিতর্কের জন্ম দেয়। বিরোধীরা বরাবরই এই সরকারি খরচের বিরোধিতা করে আসছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুদান বন্ধ করেননি, বরং প্রতি বছরই তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িয়েছেন। ২০১৮ সালে ২৮ হাজার কমিটি অনুদান পেত, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্লাবের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনুদানও।
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে ক্লাবের সংখ্যা ৪৩,০০০। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী যদি ৪৫ হাজার ক্লাব থাকে, তবে প্রতিটি ক্লাবকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দিলে মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৪৯৫ কোটি টাকা। গত বছর এই খাতে খরচ হয়েছিল ৩৬৫ কোটি টাকা, অর্থাৎ এক বছরেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি খরচ বেড়েছে। এর ওপর বিদ্যুতের বিলেও ৮০ শতাংশ ছাড় রয়েছে, যা মোট খরচকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
অনুদান বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা:
২০১৮: ২৮ হাজার কমিটি, অনুদান ১০ হাজার টাকা, মোট খরচ ২৮ কোটি টাকা।
২০১৯: ৪০ হাজার কমিটি, অনুদান ২৫ হাজার টাকা, মোট খরচ ১০০ কোটি টাকা।
২০২০: অনুদান ৫০ হাজার টাকা।
২০২১: অনুদান ৫০ হাজার টাকা।
২০২২: অনুদান ৬০ হাজার টাকা।
২০২৩: অনুদান ৭০ হাজার টাকা।
২০২৪: অনুদান ৮৫ হাজার টাকা।
২০২৫: অনুদান ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।
এই বিপুল পরিমাণ সরকারি অনুদান বৃদ্ধি একদিকে যেমন ক্লাবগুলির জন্য স্বস্তির কারণ, তেমনি অন্যদিকে রাজ্য সরকারের উপর আর্থিক বোঝা বাড়াচ্ছে এবং সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই এই অনুদানকে রাজ্যের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন।