‘হিমাচল প্রদেশের অস্তিত্ব বিলীন হবে’- হিমালয়ের বিপর্যয় নিয়ে কড়া পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের

হিমালয়ের কোলে অবস্থিত রাজ্যগুলির লাগাতার প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতিদের মতে, যদি এই ধরনের অপরিকল্পিত নির্মাণ ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে হিমাচল প্রদেশ ভারতের মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যেতে পারে। ১লা আগস্ট, ২০২৫-এ একটি হোটেল সংস্থার আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত এই বিস্ফোরক মন্তব্য করে।

হিমাচল প্রদেশে বারবার ভূমিধস, বন্যা এবং আর্থিক ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এই প্রেক্ষাপটে, সুপ্রিম কোর্ট হিমাচলের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। বিচারপতিরা উল্লেখ করেন যে, শুধুমাত্র সরকারি নির্দেশিকা দিয়ে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পরিবেশের ভারসাম্য এতটাই বিঘ্নিত হয়েছে যে, এর ফলস্বরূপ নানারকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে, যার জেরে হাজার হাজার মানুষের জীবন ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে যা উঠে এসেছে:

সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া তালিকায় বেশ কিছু কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে:
১. বন নিধন ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: বিচারপতিরা মনে করেন, অরণ্য ধ্বংস করে একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির ফলে জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে।
২. অপরিকল্পিত পর্যটন: পর্যটকদের ভিড়, আবর্জনা ও দূষণ বৃদ্ধি প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। পর্যটনের সুবিধা বাড়াতে চার লেনের রাস্তা, টানেল ও বহুতল আবাসন নির্মাণও এই সমস্যার কারণ।
৩. ভূগর্ভস্থ জল ও ভূমিধস: পাথর ফাটিয়ে টানেল তৈরি এবং অতিরিক্ত নির্মাণের ফলে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যাচ্ছে, যা ভূমিধসের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়াচ্ছে।

আদালত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে এমন নীতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে, যাতে হিমালয়ের পরিবেশগত ভারসাম্য আর নষ্ট না হয়। বিচারপতিরা বলেন, “টাকা রোজগার করাই সব নয়। যদি পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে এমন একটা দিন আসবে যেখানে হিমাচল প্রদেশ রাজ্যটাই হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।”

সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরাখণ্ডেও মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও ভূমিধসের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঋষি-গঙ্গা উপত্যকায় ২০২১ সালে এবং সিকিমে ২০২৩ সালে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়গুলিও আদালত পর্যালোচনা করে। এসব ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পত্তি নষ্ট হয়।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, রাস্তা নির্মাণ এবং পর্যটন প্রসারের নামে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হিমালয়ের প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেমে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং বিপর্যয়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাবে হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলছে, যা নদীর প্রবাহে প্রভাব ফেলছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২১০০ সালের মধ্যে উত্তরাখণ্ডের ৭০ থেকে ৯৯ শতাংশ হিমবাহ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, হিমালয়ের খাড়া ঢাল এবং নিজস্ব প্রাকৃতিক বৈচিত্র মানুষের ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার বাইরে। পরিবেশকে রক্ষা করেই উন্নয়নের পথ খুঁজতে হবে, অন্যথায় ভয়াবহ পরিণতি অনিবার্য।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy