ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা এবং গাছে ঝুলিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে অবশেষে মুখ খুলল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। শুক্রবার এক কড়া বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই ঘটনাকে ‘উন্মত্ত জনতার আচরণ’ বলে নিন্দা করেছেন এবং স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, অপরাধীদের কোনোভাবেই রেয়াত করা হবে না।
“সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই”: ইউনূসের কড়া বার্তা
ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ওপার বাংলায় যে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউনূস বলেন:
“নতুন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। এখানে উন্মত্ত জনতার এহেন আচরণ চলবে না। একদল মানুষ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি দেশবাসীকে কোনো প্ররোচনায় পা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন এবং সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি পুনরায় আশ্বস্ত করেছেন যে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করাই তাঁর সরকারের প্রধান অঙ্গীকার।
সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা নিয়ে ব্যথিত উপদেষ্টা
বৃহস্পতিবার রাতে ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেইলি স্টার’ অফিসে অগ্নিসংযোগ ও সাংবাদিকদের ১০ তলায় আটকে রাখার ঘটনায় গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন ইউনূস। তিনি এই ঘটনাকে ‘স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন:
-
এই হামলা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি ও স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
-
আক্রান্ত সংবাদকর্মী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে সরকার শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
-
ওই দুটি সংবাদমাধ্যমের পূর্ণ নিরাপত্তা ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
আঁচ করেছিলেন আগেই, তবুও রোখা গেল না তাণ্ডব
গত ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাত্রনেতা ওসমান হাদির মৃত্যু যে দেশে দাবানল সৃষ্টি করতে পারে, তা আগেভাগেই আঁচ করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৃহস্পতিবার রাতে হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে দেশবাসীকে সংযত থাকার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই আবেদন কার্যত অগ্রাহ্য করেই রাতভর ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে তান্ডব চালায় একদল বিক্ষোভকারী।
বর্তমানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি থমথমে। একদিকে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে রাজপথে উন্মত্ত মব— এই দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে ইউনূস সরকার কতটা শান্তি ফেরাতে পারে, এখন সেটাই দেখার।