বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার পূর্ববর্তী কথোপকথন নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে তার অনুরোধ ছিল, যেন ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে না পারেন। তবে মোদী নাকি এর উত্তরে বলেছিলেন, “এটা সোশ্যাল মিডিয়া, আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।”
লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে (Chatham House) এক আলোচনায় ড. ইউনূস এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “যখন আমার প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল, আমি শুধু বলেছিলাম যে আপনারা ওঁকে আতিথ্য দিতেই পারেন। আমি আপনাদের সেই নীতি ত্যাগ করতে বাধ্য করতে পারি না… কিন্তু অনুগ্রহ করে নিশ্চিত করুন তিনি যাতে বাংলাদেশি জনগণের উদ্দেশে এইভাবে কথা বলতে না পারেন।” ইউনূস দাবি করেন, শেখ হাসিনা ভারত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিয়মিত বাংলাদেশের জনগণকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন, যা বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করছে।
ড. ইউনূস মোদীর এই উত্তরে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “কী আর বলবেন? এটা একটা বিস্ফোরক পরিস্থিতি, শুধু সোশ্যাল মিডিয়া বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভারত বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে না, যা দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে এবং তাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে কূটনৈতিক নোটও পাঠিয়েছে।
ড. ইউনূস লন্ডনে তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকারের প্রধান কাজ হলো একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তবে, শেখ হাসিনার ক্রমাগত অনলাইন কার্যক্রম দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এই মন্তব্যের পর ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।