উত্তপ্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট। একদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হলো ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদিকে, অন্যদিকে ময়মনসিংহে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অজুহাতে পিটিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। এই দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
হাদির দাফন ও ইনকিলাব মঞ্চের আল্টিমেটাম
শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির জানাজা ও শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে জাতীয় কবির কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তবে এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসছে ইনকিলাব মঞ্চ।
শনিবার শাহবাগে প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সংগঠনটি। তাদের প্রধান দাবি— ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওসমান হাদি হত্যার তদন্ত রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। ইনকিলাব মঞ্চের সাফ হুঁশিয়ারি, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকার মামলার অগ্রগতি জানাতে ব্যর্থ হয়, তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর পদত্যাগ দাবি করে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে। আজ রবিবারও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
ময়মনসিংহে বিভীষিকা: দিপু দাস হত্যাকাণ্ড
এদিকে ময়মনসিংহের ভালুকায় পাইওনিয়ার্স নিটওয়্যারস কারখানার শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছে র্যাব। অভিযোগ উঠেছে, নবিকে নিয়ে কটূক্তির ‘অস্পষ্ট’ অজুহাতে তাঁকে প্রথমে কারখানা কর্তৃপক্ষ উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেয়। এরপর তাকে পিটিয়ে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
তদন্তে উঠে আসা চাঞ্চল্যকর তথ্য:
-
র্যাবের বয়ান: র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক নয়মুল হাসান জানান, ধর্ম অবমাননার বিষয়টি অত্যন্ত অস্পষ্ট। ঠিক কী বলা হয়েছিল, তা কেউ স্পষ্ট করতে পারেনি।
-
কর্তৃপক্ষের ভূমিকা: কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ দিপুকে পদত্যাগে বাধ্য করে পুলিশের হাতে না দিয়ে উন্মত্ত জনতার হাতে তুলে দেন। এই অবহেলার দায়ে কারখানার দুই কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
-
গ্রেফতারি অভিযান: সিসিটিভি ফুটেজ দেখে র্যাব ৭ জন এবং পুলিশ ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
“ধর্ম অবমাননার বিষয়টি কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। কারখানার ভেতরে বাগ্বিতণ্ডার পর কেন তাকে নিরাপত্তার বদলে জনতার হাতে দেওয়া হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” — নয়মুল হাসান, অধিনায়ক, র্যাব–১৪।