হরিয়ানায় বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে হেনস্তা, ঠাকুরদার দলিল চাওয়ায় আতঙ্ক, তীব্র রাজনৈতিক তরজা

রাজগঞ্জের পরিযায়ী শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার হরিয়ানায় আরও এক বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের হেনস্তার ঘটনা সামনে এল। ময়নাগুড়ির উল্লার ডাবরি গ্রামের নরেশ মণ্ডল নামের এক শ্রমিককে শুধু বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশি সন্দেহে তার ঠাকুরদার জমির দলিল দেখাতে বলেছে হরিয়ানা পুলিশ। সাত দিনের মধ্যে দলিল দেখাতে না পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় শুধু নরেশের পরিবার নয়, গোটা গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

২০১১ সাল থেকে পরিবার নিয়ে দিল্লিতে বসবাসকারী নরেশ বর্তমানে হরিয়ানার একটি কাপড়ের কারখানায় কাজ করেন। তার অভিযোগ, তিনি বাঙালি জানতে পেরেই হরিয়ানা পুলিশ তার কারখানায় গিয়ে নথি দেখতে চায়। আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড দেখানোর পরও পুলিশ সন্তুষ্ট হয়নি এবং আগামী সাত দিনের মধ্যে তার ঠাকুরদার নামে জমির দলিল জমা দিতে বলেছে। নরেশের বাবা ননি চন্দ্র মণ্ডল এই খবরে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, কারণ তার কাছে তার বাবার জমির দলিল নেই। তিনি কীভাবে তার ছেলেকে সাহায্য করবেন, তা নিয়ে দিশাহারা।

রাজনৈতিক তরজা ও তৃণমূলের প্রতিবাদ:
ঘটনা সামনে আসতেই ময়নাগুড়িতে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গেছে। যুব তৃণমূল জেলা সভাপতি রামমোহন রায় উল্লাডাবরিতে নরেশের স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং নরেশের বাবার সঙ্গে দেখা করে যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। রামমোহন রায় অভিযোগ করেন, “বাংলায় কথা বলার অপরাধে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা এই পরিবারকে সব রকমের সহযোগিতা করব। প্রয়োজনে আমরা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে নরেশকে ফিরিয়ে আনব।”

অন্যদিকে, বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “পুলিশ কাগজপত্র নিশ্চয়ই দেখতে চাইতে পারে। এতে অহেতুক ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনে বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই আমরা সাহায্য করব।” তিনি আরও বলেন, “যারা বাংলাদেশি হিন্দু, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে এসেছেন, তাঁরাও নিশ্চিত থাকুন। তাঁদের কোনো সমস্যা হবে না। কারণ হিন্দুরা বিজেপিকে ভোট দেয়। তাই বিজেপি কালিদাস হয়ে যে গাছের ডালে বসে আছে, সেই গাছের ডাল কাটবে না।”

প্রতিবেশী তাপস মণ্ডল নরেশের সমস্যার কথা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “নরেশ আমার ছোটবেলার বন্ধু। পাশাপাশি বাড়ি। ওর সমস্যা শুনে আমরাও চিন্তিত। আমাদের এখানেও ভিন রাজ্যের লোক থাকে, চাকরি বা ব্যবসা করে। এখানে তো এইসব নেই।”

সম্প্রতি পুনেতে এক রাজগঞ্জের পরিযায়ী শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছিল, যেখানে অভিযোগ উঠেছিল তাকে বাঙালি বলে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। এবার নরেশের এই নতুন সমস্যা বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। নরেশ কি এই জটিল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy