কেরলের দুই প্রখ্যাত মন্দির— সবরীমালা ও গুরুবায়ুর— থেকে সোনা এবং মূল্যবান সম্পদ লোপাটের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ২০১৯ সালের গুরুবায়ুর অডিট রিপোর্টে মন্দিরের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় গুরুতর ত্রুটি এবং কোটি টাকার ক্ষতির ইঙ্গিত মিলেছে।
গুরুবায়ুর: ₹৭৯ লক্ষের ক্ষতি, নিখোঁজ হাতির দাঁত!
গুরুবায়ুর মন্দিরের ২০১৯ সালের অডিট রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মন্দিরের বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ— যেমন সোনা, হাতির দাঁত, জাফরানি ফুল ও করাল কাঠের বীজ— সঠিকভাবে রেকর্ডে নথিভুক্ত করা হয়নি। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার ‘স্বর্ণ স্কিমে’ প্রায় ৭৯ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও, প্রায় ২ হাজার কেজি পুরনো পাত্র বা ‘উরুলি’ (যা পল্লক্কাদের বাসিন্দারা দান করেছিলেন) এবং পুন্নাথুর হাতি দালানের ৫৩০ কেজির বেশি হাতির দাঁতের খোঁজও পাওয়া যায়নি। যদিও গুরুবায়ুর দেবস্বম বোর্ড জানিয়েছে, সমস্ত ত্রুটির সমাধান করা হয়েছে এবং বিষয়টি হাইকোর্টে বিস্তারিত এফিডেভিটেও জমা দেওয়া হয়েছে।
সবরীমালা: ৪ কেজি সোনা ‘উধাও’, ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা
সবরীমালা মন্দিরের সোনা চুরির ঘটনা বর্তমানে কেরল হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্তাধীন। রহস্যের সূত্রপাত ২০১৯ সালে, যখন ভগবান আয়াপ্পার মূর্তির ওজন ছিল ৪২ কেজি ৮০০ গ্রাম। সম্প্রতি মাপা হলে দেখা যায়, ওজন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ কেজি ২৫৮ গ্রামে— অর্থাৎ প্রায় ৪ কেজিরও বেশি সোনা উধাও!
দেবস্বম বোর্ড এর কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে না পারলেও, তাদের ধারণা মূর্তির মেরামতের সময় ওজন কমেছে। তবে হাইকোর্ট এই ঘটনাকে ‘একক দুর্ঘটনা’ মানতে নারাজ। আদালত এটিকে ‘সুসংগঠিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)-এর রিপোর্টেও দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ৪০০ গ্রামের বেশি সোনা নিজের কাছে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য অনুমতিও চাওয়া হয়েছিল। আদালত বলেছে, ‘এই ধরনের ত্রুটি কোনওভাবেই দুর্ঘটনাজনিত নয়।’
বিজেপির কড়া সমালোচনা
কেরলে বিরোধী দল বিজেপি এই ঘটনায় বাম সরকারের দিকে সরাসরি আঙুল তুলেছে। দলের মুখপাত্র প্রদীপ ভাণ্ডারি কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, “শবরীমালার পরে গুরুবায়ুর মন্দিরেও সোনা উধাও, বাম সরকারের নীতিগত অবহেলা হিন্দু আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতি বড় ধাক্কা।”
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হাইকোর্ট নতুন রিট পিটিশন দায়ের করেছে এবং বোর্ডের মিনিটস বুক জব্দ করে SIT-এর কাছে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর সোনার প্লেট পুনরায় স্থাপন করা হয় এবং তা আদালতের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষাও করা হয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৫ নভেম্বর।