স্বঘোষিত ধর্মগুরু স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতীকে (তথাকথিত ‘দিল্লি বাবা’) গ্রেফতারের পর তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে আসছে। পুলিশের হাতে এসেছে তাঁর একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, যা থেকে তাঁর প্রাইভেট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের মহিলা পড়ুয়াদের শোষণ এবং অশ্লীল প্রস্তাব দেওয়ার চিত্র উঠে এসেছে।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে ‘সেক্স পার্টনার’ জোগাড়ের চেষ্টা
পুলিশের হাতে আসা একটি কথোপকথনে দেখা গেছে, ৬২ বছরের এই তথাকথিত ‘বাবা’ এক ছাত্রীকে লিখছেন, “একজন দুবাই শেখ সেক্স পার্টনার চাইছে, তোমার কোনও সুন্দর বন্ধু আছে?” মেয়েটি উত্তর দেন, “কেউ নেই।” তখন চৈতন্যানন্দ ফের জিজ্ঞাসা করেন, “কীভাবে সম্ভব? তোমার কোনও সহপাঠী? জুনিয়র?”
অন্যান্য চ্যাটে তিনি গভীর রাতে ও ভোরে অযথা বারবার মেসেজ পাঠাতেন। যেমন, “Babyyyyy”, “Baby where are you?”, “Good Morning Baby”, ইত্যাদি। একবার তিনি ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন— “তুমি আমার সঙ্গে শোবে না?” অন্য কথোপকথনে তিনি লেখেন, “চলো ডিস্কো ডান্স করি।”
এফআইআর (FIR)-এ অন্তত ১৭ জন ছাত্রী তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগ, তিনি ছাত্রীদের গভীর রাতে নিজের কোয়ার্টারে ডেকে নিতেন এবং অশ্লীল মেসেজ পাঠাতেন।
যেভাবে গ্রেফতার হলেন ‘পলাতক’ বাবা
দীর্ঘ প্রায় দু’মাস ধরে পুলিশের চোখ এড়িয়ে বৃন্দাবন, মথুরা এবং আগরা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন চৈতন্যানন্দ। ছোট হোটেলে থাকছিলেন এবং ধরা এড়াতে ট্যাক্সি ব্যবহার করছিলেন। অবশেষে, গত রবিবার ভোররাত সাড়ে ৩টায় আগরার তাজগঞ্জ এলাকার একটি হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তিনি ‘পার্থ সারথি’ নামে চেক-ইন করেছিলেন এবং রুম নম্বর ১০১-এ ছিলেন।
উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র ও সম্পত্তির বিবরণ
পুলিশ তাঁকে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়েছে। তল্লাশিতে তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে:
একটি আইপ্যাড এবং তিনটি মোবাইল ফোন, যার একটি থেকে ইনস্টিটিউটের সিসিটিভি ক্যামেরা ও হোস্টেল দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
ভুয়ো ভিজিটিং কার্ড, যেখানে নিজেকে “UN Economic and Social Council-এর স্থায়ী রাষ্ট্রদূত” এবং “BRICS-এর বিশেষ দূত” হিসেবে দেখিয়েছেন।
দুটি পাসপোর্ট (একটিতে নাম ‘স্বামী পার্থ সারথি’ এবং অন্যটিতে ‘স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী’), যেখানে জন্মস্থান ও পিতৃপরিচয় নিয়েও বৈপরীত্য রয়েছে।
পুলিশ তাঁর প্রায় ৮ কোটি টাকার সম্পত্তি ফ্রিজ করেছে। এছাড়াও আগস্ট মাসে এফআইআর দায়ের হওয়ার পরেও তিনি ভুয়ো কাগজ ব্যবহার করে ৫০ লাখ টাকার বেশি তুলেছিলেন।
জানা গেছে, তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের ভয় দেখানো ও প্রমাণ মুছে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত তিনজন মেয়ের মুখোমুখিও এই বাবাকে করানো হবে। এই ঘটনা দিল্লি-আগ্রা থেকে শুরু করে গোটা দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।