কাশির সিরাপ খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ফের আতঙ্ক ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে বেশ কিছু শিশুর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় এবার নাম জড়াল ‘কোল্ডরিফ’ নামক একটি কাশির সিরাপের। এই ঘটনার জেরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও বিজেপি শাসিত দুই রাজ্যের মন্ত্রীরা এখনও পর্যন্ত কাশির সিরাপের সঙ্গে শিশুমৃত্যুর সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ।
৯ শিশুর কিডনি বিকল!
ঘটনার সূত্রপাত মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়ায়, যেখানে কিডনি বিকল হয়ে নয়টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, মৃত্যুর আগে ওই শিশুরা এই নির্দিষ্ট কাশির সিরাপটি খেয়েছিল। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে রাজস্থানেও, যেখানে সিকার জেলায় দুই শিশু এবং ভরতপুরে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রাজস্থানে এই সিরাপ খেয়ে বমি, তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এবং জ্ঞান হারানোর মতো উপসর্গে আরও বেশ কয়েকজন শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
নেতারা মানছেন না, কিন্তু কেন আতঙ্ক?
শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সিরাপের যোগ মেনে নিতে নারাজ মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের মন্ত্রীরা:
মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেন্দ্র শুক্ল হঠাৎই ঘোষণা করেন, শিশুমৃত্যুর সঙ্গে কাশির সিরাপের কোনো যোগ নেই। তিনি দাবি করেন, “কাশির সিরাপের উপর ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।” যদিও পরে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে সিরাপের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে এবং ICMR-এর রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
রাজস্থানের স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, ভরতপুর ও সিকারের শিশুমৃত্যুর ঘটনা সরকারি ‘বিনামূল্যে ওষুধ প্রকল্প’-এর অধীনে বিতরণ করা কাশির সিরাপের কারণে ঘটেনি। রাজস্থানের গণস্বাস্থ্য অধিকর্তা দাবি করেন, শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাড়িতেই এই সিরাপ খাওয়ানো হয়েছিল এবং চিকিৎসকেরা ‘ডেক্সট্রোমেথরফ্যান’ যুক্ত ওষুধ লেখেননি।
সিরাপ খেয়ে জ্ঞান হারালেন চিকিৎসক!
এই আতঙ্কের মধ্যেই সিকারের এক চিকিৎসক তারাচাঁদ যোগী সিরাপটি যে নিরাপদ, তা প্রমাণ করতে গিয়ে নিজেই সেটি পান করেন। কিন্তু সিরাপ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জ্ঞান হারান বলে খবর। এই ঘটনা জানাজানি হতেই সিরাপটি আদৌ নিরাপদ কি না তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছে।
তদন্ত এবং পদক্ষেপ:
মধ্যপ্রদেশ থেকে ৫০০ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে NCDC পরীক্ষা করেছে এবং রিপোর্টে জানানো হয়েছে, পরীক্ষিত নমুনায় কোনো সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু মেলেনি। ফলে কাশির সিরাপের উপর সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
আতঙ্কের আবহে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করে শুক্রবার তামিলনাড়ু সরকার রাজ্যে ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
রাজস্থানে নিয়ম ভেঙে ডিএক্সএম (DXM) যুক্ত সিরাপ দেওয়ার অভিযোগে এক চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট ফার্মাসিস্টকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রাজস্থান সরকার ইতিমধ্যেই এই সিরাপের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।