সিঁদুর খেলার পর আর মায়ের মুখ দেখেন না রাজপরিবার! আবেগ ও ঐতিহ্যের জনসমুদ্র জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে!

আনন্দ, উৎসব শেষে আজ বিষাদের সুর। কিন্তু বিসর্জনের দিনেও উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে ধরা পড়ল এক স্বতন্ত্র ও শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য। রীতি মেনে শূন্যে গুলি ছুঁড়ে দুর্গাকে বিদায় জানানো হল। রাজবাড়ির পুকুরেই নিরঞ্জন দেওয়া হলো প্রতিমাকে।

ইলিশ, পান্তা ভাত আর শূন্যে গুলি
বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির পুজোর রীতিনীতি বরাবরই বিশেষ। রাজ পুরোহিত শিবু ঘোষাল জানান, দশমীর দিন ভোরবেলা প্রথমে ফল, দই, মিষ্টি দিয়ে মাকে নিবেদন করা হয়। এরপর মাকে যে বিশেষ ভোগ দেওয়া হয়, তাতে রয়েছে:

পান্তা ভাত

ইলিশ মাছ ভাজা

ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচু শাখ

শাপলার ঝোল

পাঁচ রকমের ভাজা, দই ও মিষ্টি

দশমীর পুজোর পর প্রথমে দর্পণ বিসর্জন হয়। এরপর রাজপরিবারের পুত্রবধূরা প্রথম মাকে সিঁদুর পরিয়ে বরণ করেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো বিসর্জনের রীতি। মা দুর্গাকে বিসর্জনের সময় রাজপরিবারের তরোয়াল, গদা-সহ পুরনো জিনিস নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয় এবং শেষবারের মতো শূন্যে গুলি ছুঁড়ে দেবীকে বিদায় জানানো হয়।

রাজবাড়ির নিয়ম অনুযায়ী, একবার দুর্গা প্রতিমাকে মন্দির থেকে বের করার পর রাজ পরিবারের সদস্যরা আর মায়ের মুখ দর্শন করেন না।

৫১১ বছরের ঐতিহ্য ও জনসমুদ্র
রাজপরিবারের সদস্য প্রণত বসু জানান, ১৫১০ সালে বিশু সিংহ ও শিশু সিংহ রাজবাড়িতে দুর্গাপূজার সূচনা করেন। সেই পুরনো রীতি মেনেই আজও পুজোর আয়োজন করা হয়।

শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে আজও শহরবাসীর আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই মা দুর্গাকে বিসর্জনের দিন রাজবাড়ির মন্দির চত্বর একেবারে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন দেবীকে বিদায় জানাতে।

রাজবাড়ির পুত্রবধূ লিন্ডা বসু বলেন, “দশমীর দিন এত মানুষ আসেন, যা আমাদের ধারনার বাইরে। মা সবাইকে ডেকে আনেন। জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির দুর্গাপুজো জলপাইগুড়ির একটা আলাদা ঐতিহ্য বহন করে। আমরাও চেষ্টা করি সেই ঐতিহ্যকে বহন করতে।”

দর্শনার্থী সমাপ্তি সরকার জানান, রাজবাড়ির এই সিঁদুর খেলায় অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে মহিলারা আসেন এবং এই ঐতিহ্যকে উপভোগ করেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy