ধানক্ষেত থেকে লোকালয় পর্যন্ত—সাপের উপদ্রব এবং সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাঁকুড়া জেলার গ্রামাঞ্চলে। বিশেষ করে এই সময়ে চন্দ্রবোড়া সাপই (Russell’s Viper) ভীতির প্রধান কারণ। পরিবেশবাদী সংস্থা ‘মাই ডিয়ার ট্রিজ এন্ড ওয়াইল্ডস’-এর রিপোর্ট অনুসারে, সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনায় বাঁকুড়া জেলা এখন রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
পরিসংখ্যান: বাঁকুড়ার ভয়ংকর চিত্র
সংস্থার সভাপতি সঙ্গীতা বিশ্বাস ও সম্পাদক ঝর্ণা গাঙ্গুলি এই বছরের প্রথম ছয় মাসের (১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন) একটি চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন:
রাজ্যে আক্রান্ত: এই ৬ মাসে রাজ্যে মোট ৩৬,৪৫২ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন।
মৃত্যুর সংখ্যা: রাজ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ১২৯ জনের।
বাঁকুড়ার অবস্থান: পূর্ব বর্ধমানের (২৭ জন) পরই বাঁকুড়ায় মারা গিয়েছেন ১৬ জন। অন্যান্য জেলাগুলির মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে ১২ জন, মুর্শিদাবাদে ১১ জন এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ৮ জন।
চন্দ্রবোড়াই কেন মূল সমস্যা?
শরতের শেষে ধান গাছ পরিপক্ক হওয়ায় ইঁদুর ধানজমিতে হানা দেয়। যেহেতু চন্দ্রবোড়া সাপের প্রধান খাদ্য ইঁদুর, তাই খাবারের লোভে তারা ধানক্ষেতের আল, পুকুর ও জলাশয়ের ধারে ওৎ পেতে থাকে। জমির পরিস্থিতি দেখতে গেলেই ঘটছে চন্দ্রবোড়ার কামড়ের ঘটনা।
বাঁকুড়ার অন্যতম প্রধান বিষধর সাপ এই চন্দ্রবোড়া। এই সাপ কামড়ালে অনেক ক্ষেত্রেই অ্যান্টি-ভেনম সিরাম (AVS) ঠিকমতো কাজ করছে না, যা আতঙ্কের মাত্রা আরও বাড়াচ্ছে।
যে সাপ জীবন বাঁচায়, তাকেই মারা হচ্ছে
পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, চন্দ্রবোড়ার সক্রিয়তা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো শাঁখামুটি বা শঙ্খিনী সাপের সংখ্যা কমে যাওয়া। শাঁখামুটি সাপ চন্দ্রবোড়াসহ অন্যান্য বিষধর সাপ খেয়ে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
❌ পরিবেশ সংস্থার আবেদন: “শাঁখামুটি অত্যন্ত বিষধর হলেও মানুষকে কামড়ানোর ঘটনা বিরল। অথচ, নির্বিচারে এই সাপগুলিও মেরে ফেলা হচ্ছে। এতেই চন্দ্রবোড়ার মতো সাপেদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে,” জানান সংস্থার কর্মকর্তারা।
সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পরিবেশবাদী সংস্থা বর্তমানে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গান, নাচ ও নাটকের মাধ্যমে সাপ না মারার আবেদন জানাচ্ছে। তাদের স্পষ্ট বার্তা, ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করে শস্য রক্ষায় চন্দ্রবোড়ার অবদান অস্বীকার করা যায় না। সাপ মেরে ফেলার প্রবণতা কমলেই এই সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।