উৎসবের আবহে মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া জেলায় এক মর্মান্তিক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জানা গিয়েছে, সাধারণ জ্বর-কাশির উপসর্গ দেখা দেওয়ায় কফ সিরাপ খাওয়ানোর পর ৫ বছরেরও কম বয়সী ৬টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
কফ সিরাপেই কিডনি বিকল
জানা গিয়েছে, সাধারণ জ্বর-কাশির উপসর্গ দেখা দেওয়ায় ছিন্দওয়াড়া জেলার স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ এবং কোল্ড্রিফ (Coldrif) এবং নেক্সট্রো-ডিএস (Nextro-DS) নামে দুটি কফ সিরাপ খেয়েছিল ওই শিশুরা। এরপর তারা সুস্থ হয়ে উঠলেও কিছুদিন পর ফের অসুস্থ হয় এবং মূত্রত্যাগে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়।
শিশুদের চিকিৎসার জন্য মহারাষ্ট্রের নাগপুরে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, তাদের গুরুতর কিডনির সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিডনি বায়োপসিতে ডাইথিলিন গ্লাইকল বিষক্রিয়া ধরা পড়ে। এই বিষক্রিয়ার জেরেই শিশুদের কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু হয়।
এক সন্তানহারা মা শোকে ভেঙে পড়ে বলেন, “আমার বাচ্চা কোনোদিন অসুস্থ হয়নি। সাধারণ জ্বর কাশির জন্য যে সন্তান হারাবো ভাবতেই পারিনি।”
জেলা জুড়ে দুটি সিরাপ নিষিদ্ধ
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে ছিন্দওয়ারার কালেক্টর শিলেন্দ্র সিং তাৎক্ষণিকভাবে জেলা জুড়ে ওই দুটি কফ সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ করেছেন এবং ডাক্তার, ফার্মেসি ও অভিভাবকদের কাছে জরুরি পরামর্শ জারি করেছেন।
কালেক্টর সিং জানান, “বায়োপসি রিপোর্টে দূষিত ওষুধকেই কিডনি বিকল হওয়ার কারণ হিসেবে দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।” যেহেতু মৃত শিশুদের গ্রাম থেকে নেওয়া জলের নমুনায় কোনো সংক্রমণ মেলেনি, তাই এই ঘটনায় ওষুধের যোগসূত্র উপেক্ষা করা যায় না।
তদন্তে সিআইডি ও স্বাস্থ্য দফতর
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলা প্রশাসন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দলকে তলব করেছে। এছাড়া ভোপালের স্বাস্থ্য বিভাগের দুই সদস্যের একটি দলও পারাসিয়া, নিউটন চিকলি এবং আশেপাশের গ্রামগুলিতে পৌঁছেছে।
দলটির চিকিৎসক ডঃ নরেশ গোনার জানিয়েছেন, ২৪শে আগস্ট প্রথম রোগীর খবর পাওয়া যায় এবং ৭ই সেপ্টেম্বর প্রথম মৃত্যু ঘটে। ২০শে সেপ্টেম্বরের পর থেকে কিডনি জটিলতার আরও ঘটনা দেখা দিয়েছে। আইসিএমআর টিম ইতিমধ্যেই আরও বিশ্লেষণের জন্য পুনের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটে রক্ত এবং ওষুধের নমুনা পাঠিয়েছে। মৃত শিশুদের পরিবার দ্রুত তদন্ত এবং বিচারের দাবি জানিয়েছে।