সংবাদ প্রকাশের জেরে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন, বাঁকুড়ায় অনাহারে মৃত বৃদ্ধের পরিবারে পৌঁছল ত্রাণ

সংবাদমাধ্যম ইটিভি ভারতের একটি প্রতিবেদনের জেরে অবশেষে টনক নড়ল প্রশাসনের। গত শুক্রবার অনাহারে মৃত বৈদ্যনাথ দাস মোদকের (৬৫) বাড়িতে তড়িঘড়ি ছুটে গেলেন প্রশাসনিক আধিকারিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। প্রশাসনের তরফ থেকে তুলে দেওয়া হলো ত্রাণ সামগ্রী, এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য দ্রুত চালু করা হলো রেশন পরিষেবা।

স্থানীয় কুমিদ্যা গ্রামের বাসিন্দা বৈদ্যনাথের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার দাবি করে, দীর্ঘদিন ধরে দারিদ্র্য ও খাদ্য সংকটে ভুগছিলেন তারা। তার স্ত্রী কল্পনা দাস মোদক আধার কার্ড না থাকায় প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ ছিল রেশন পরিষেবা। অন্যদিকে, অসুস্থতার কারণে মিষ্টির দোকানের কর্মী বৈদ্যনাথ কাজ হারিয়েছিলেন। তাদের পরিযায়ী শ্রমিক ছেলে সোমনাথের সামান্য রোজগারে সংসার চালানো কঠিন ছিল, ফলে অনেক সময়ই দু’জনের খাবার জুটত না।

খবর প্রকাশের পর সক্রিয় প্রশাসন

সোমবার ইটিভি ভারতে এই খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরই স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। ওই দিনই বাঁকুড়া-১ ব্লকের বিডিও-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা বৈদ্যনাথের বাড়িতে গিয়ে ত্রিপল, জামাকাপড় ও শুকনো খাবার-সহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন। একই সঙ্গে খাদ্য দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যত দ্রুত সম্ভব পরিবারের রেশন কার্ড পুনরায় চালু করার জন্য। এরপর মঙ্গলবার, সোমনাথ স্থানীয় রেশন শিবির থেকে খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করেন।

প্রশাসনের এই তৎপরতায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন পরিবারের সদস্যরা। বৈদ্যনাথের ছেলে সোমনাথ বলেন, “আমাদের দুর্দশার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। তারা নিয়মিত রেশন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি, মায়ের বৃদ্ধভাতা ও আমাদের জন্য ঘর ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।”

প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক

তবে এই ঘটনাটি ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। বাঁকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, এই অনাহারের খবরটি “বানানো গল্প”। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে এখন আর অনাহারে মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি নেই। তিনি এই ঘটনার জন্য সিপিএম ও বিজেপির স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন।

অন্যদিকে, বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রীশেখর দানা এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “যদি সত্যি এমনটা না হয়, তাহলে একজন মানুষ কেন মারা গেলেন? এই সরকার একটা মিথ্যাচারের সরকার।”

অন্যদিকে, স্থানীয় রেশন ডিলার বিশ্বরূপ চৌধুরী জানান যে আধার কার্ডের সঙ্গে রেশন কার্ডের লিঙ্ক না থাকায় এতদিন পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি স্বীকার করেন, সরকার বর্তমানে আধার ছাড়াও রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।

রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই, দীর্ঘদিন পর মোদক পরিবারের মুখে হাসি ফুটেছে। আজ থেকে তারা দুমুঠো পেট ভরে খেতে পাবেন, এই আশাতেই খুশি তারা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy