শ্রীনগর বিমানবন্দরে সেনা আধিকারিকের নজিরবিহীন তাণ্ডব, স্পাইসজেট কর্মীদের উপর হামলা, গুরুতর আহত ৪

শ্রীনগর বিমানবন্দরে এক উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিকের নজিরবিহীন হামলায় স্পাইসজেটের চার কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজনের মেরুদণ্ডে ফাটল এবং আরেকজনের চোয়াল ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই লজ্জাজনক ঘটনাটি গত ২৬ জুলাই দিল্লিগামী একটি স্পাইসজেট বিমানে ওঠার সময় ঘটে। অভিযোগ, অতিরিক্ত কেবিন ব্যাগেজ চার্জ চাওয়াকে কেন্দ্র করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ঋতেশ কুমার সিংহ নামের ওই আধিকারিক হিংস্র হয়ে ওঠেন।

স্পাইসজেটের পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত যাত্রী তার সঙ্গে ১৬ কেজি ওজনের দুটি কেবিন ব্যাগ নিয়ে বিমানে উঠতে যাচ্ছিলেন, যা নির্ধারিত ৭ কেজির সীমার থেকে অনেক বেশি। বিমান সংস্থার কর্মীরা অতিরিক্ত ব্যাগেজ চার্জের কথা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং চেক-ইন প্রক্রিয়া শেষ না করেই জোর করে এরোব্রিজের দিকে এগিয়ে যান।

সিআইএসএফ-এর এক নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিংহ আচমকাই চারজন গ্রাউন্ড স্টাফের উপর চড়াও হন। স্পাইসজেটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি “ঘুষি, লাথি ও স্টিলের কিউ-স্ট্যান্ড দিয়ে বারবার আক্রমণ চালান।” ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও সামনে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে অভিযুক্ত আধিকারিক একটি ইস্পাতের সাইনবোর্ড স্ট্যান্ড দিয়ে কর্মীদের উপর চড়াও হচ্ছেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, একজন কর্মী অজ্ঞান হয়ে পড়লেও অভিযুক্ত তাঁকে লাথি মারতে থাকেন। অন্য এক কর্মী মুখে লাথি খেয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন, তার নাক ও মুখ দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়।

ঘটনার পরপরই আহত কর্মীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিমান সংস্থা স্পাইসজেট এই বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে একটি এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) দায়ের করেছে। পাশাপাশি, অভিযুক্ত যাত্রীকে ‘নো-ফ্লাই’ তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যার ফলে ভবিষ্যতে তিনি কোনো বিমানে ভ্রমণ করতে পারবেন না। স্পাইসজেট বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রককেও আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছে এবং দোষীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

এদিকে, ভারতীয় সেনাবাহিনীও এই ঘটনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং পুলিশি তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে। সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে এবং বলেছে যে, তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিমানবন্দরের মতো একটি উচ্চ-নিরাপত্তা এলাকায় একজন প্রশিক্ষিত সেনা আধিকারিকের কাছ থেকে এমন হিংসাত্মক আচরণ শুধু বিস্ময়করই নয়, বরং বিমান নিরাপত্তা এবং যাত্রী ব্যবস্থাপনার দিক থেকেও তা গভীর উদ্বেগজনক। এই ঘটনা প্রশাসনিক স্তরে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে দেশবাসী।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy