রাজ্যে শীতের আমেজ পুরোদমে শুরু হতেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরের কেলেঘাই নদীর পাড় পরিণত হয়েছে পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গরাজ্যে। প্রতি বছরের মতো এবারও নিয়ম মেনে নভেম্বর মাস থেকেই অতিথি পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। নদীর পাড়ে এখন সারাদিন দেখা যাচ্ছে নানা রঙের পাখির ওড়াউড়ি, যা স্থানীয়দের মধ্যে খুশির হাওয়া এনে দিয়েছে।
এই সময় নদীর ধারে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটক, পাখিপ্রেমী এবং ফটোগ্রাফাররা। সকাল থেকে তাঁরা লেন্সে পাখিদের মনোমুগ্ধকর মুহূর্ত ধরে রাখার জন্য অপেক্ষা করেন।
শামুকখোল ও জলপিপির রাজত্ব:
এ বছর কেলেঘাই নদীর পাড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিশেষভাবে চোখে পড়ছে সাইবেরিয়ান ক্রেন, যাদের বাংলায় বলা হয় শামুকখোল। এরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় এবং শামুক ও মাছ খেতে পছন্দ করে। এছাড়াও জলাশয়ের ধারে অবাধে হেঁটে বেড়ানো জলপিপি পাখির দলও এসেছে। প্রয়োজনে তারা শালুকপাতা বা পদ্মপাতার উপর দিয়ে দিব্যি হেঁটে চলে। তাদের ডাকে নদীর পাড়ের শান্ত পরিবেশ আরও সতেজ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়দেব করণ বলেন, “এ দৃশ্য দেখতে আমরা সারা বছর অপেক্ষা করি। পাখিরা এলেই নদীর ধারে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। মনে হয় শীত সত্যিই চলে এসেছে।”
তবে আনন্দের মাঝে দুশ্চিন্তা:
যদিও প্রকৃতির এই অতিথিদের আগমন আনন্দের, তবুও পরিবেশবিদদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞ ড. সুদীপ্ত ঘোড়াই একটি চরম সতর্কতা জারি করেছেন।
তিনি বলেন, “এ বছর পাখির সংখ্যা স্পষ্টভাবে কম। নদীর ধারে গাছ কেটে বসতি স্থাপন করায় পাখিদের আশ্রয়স্থল ও প্রজননের জায়গা নষ্ট হচ্ছে। দূষণও দ্রুত বাড়ছে, যার ফলে জল ও পরিবেশ পাখির জন্য নিরাপদ থাকছে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে অতিথি পাখির সংখ্যা আরও কমে যাবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারাও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, আগে নদীপাড় ভরে উঠত শামুকখোল আর জলপিপির দলে, এখন সেই দৃশ্য অনেকটাই ফিকে। তবে সন্ধ্যা নামলে পাখিদের দল বেঁধে ফিরে যাওয়ার দৃশ্য এখনো মন ভরিয়ে তুলছে কেলেঘাই নদীর পাড়ে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের।