বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই শিক্ষাদর্শ, যেখানে তিনি প্রকৃতির কোলে খোলা আকাশের নিচে পড়াশোনার ওপর জোর দিয়েছিলেন, সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বীরভূমের সাঁইথিয়া শহরের অভেনানন্দ মহাবিদ্যালয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রামের এই যুগে ছাত্রছাত্রীদের বইমুখী করে তুলতে কলেজটি তৈরি করেছে এক ব্যতিক্রমী ‘গাছ লাইব্রেরি’।
বোলপুর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাঁইথিয়া শহরের ৬০ বছরের পুরোনো এই অভেনানন্দ মহাবিদ্যালয়টি কলেজের মাঠে এমন এক ব্যবস্থা করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা যেমন খোলা হাওয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারবে, তেমনই হাতের কাছে পেয়ে যাবে অসংখ্য বইয়ের সম্ভার। কলেজের মাঠে বড় বড় গাছের ডালে ছোট ছোট বক্স তৈরি করে সেখানে সারি সারি বিভিন্ন ধরনের বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
এই লাইব্রেরিতে কোনো তালা দেওয়া থাকে না, তাই যে কেউ এখানে প্রবেশ করে নিজের পছন্দমতো বই নিয়ে পড়তে পারেন। কেবল শিক্ষার্থীরাই নয়, অনেক সময় অভিভাবকেরাও নিজেদের ব্যস্ততার ফাঁকে মোবাইলে রিলস না দেখে এই বইগুলোর পাতায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন।
কলেজের এই মহৎ উদ্যোগটি শিক্ষক মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এমন একটি উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। যখন সবাই মোবাইল ফোনে মগ্ন, তখন এই ধরনের প্রয়াস শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং তাদের মনন বিকাশে সহায়ক হবে।
বর্তমানে, এই উদ্যোগ শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি ভালো প্রভাব ফেলবে বলে সকলে মনে করছেন। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহই বাড়াবে না, বরং প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সাহায্য করবে। রবীন্দ্রনাথের ‘ব্রহ্মাচার্যশ্রম’-এর মতোই এখানে শিক্ষার্থীরা চার দেওয়ালের বাঁধন ছাড়া প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছে। এই অভিনব উদ্যোগটি আশপাশের বহু মানুষের কাছেও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।