স্কুলের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকদের দেখা নেই, দরজায় ঝুলছে তালা। বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা নিজেরাই ক্যামেরা হাতে স্কুলের সামনে হাজির হলেন। উদ্দেশ্য, শিক্ষকদের অনিয়ম হাতেনাতে ধরে প্রমাণ করা। রামনগর ২ ব্লকের মৈতনা এলাকার উত্তর কল্যাণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিভাবকদের ধারণ করা একটি ভিডিও (যার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি) সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর শিক্ষকদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উত্তর কল্যাণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৪৫ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। একজন প্রধান শিক্ষক এবং দুজন সহকারী শিক্ষক, এই তিনজনই স্কুলটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে যে, এই শিক্ষকরা প্রায়শই নিজেদের খেয়ালখুশি মতো স্কুলে আসেন। এর ফলে সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা সময় মতো স্কুলে পৌঁছালেও, স্কুলের গেটে তালা ঝুলতে দেখে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে বাধ্য হয়।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকরা দেরি করে এলেও তা স্বীকার করতে চাইতেন না। তাই এই অনিয়ম ধরতে তারা নিজেরাই স্কুলে ‘অভিযান’ চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সকাল ১১টা ১০ মিনিটে একজন শিক্ষক স্কুলে এসেছেন। দেরিতে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে মোবাইলে কাউকে ফোন করতে থাকেন। এরপর ১১টা ২৫ নাগাদ প্রধান শিক্ষক ও অন্য সহকারী শিক্ষক একটি বাইকে চড়ে স্কুলে আসেন। তাদের দেরির কারণ জানতে চাইলে তারা মিড-ডে মিলের বাজার ও ব্যাংকের কাজের অজুহাত দেন। প্রতিদিনের এই অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করলে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “আমরা কোনো উত্তর দেব না। যেখানে জানানোর, জানাতে পারেন।”
এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, হাতেগোনা কয়েকটি স্কুল ছাড়া বেশিরভাগ প্রাথমিক স্কুলের চিত্র একই। অভিভাবকরা অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে শিক্ষকদের অনিয়ম বন্ধ এবং পঠনপাঠনের মান উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ মান্না বলেন, “বেসরকারি স্কুলের চাপে এমনিতেই সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলো সংকটে পড়েছে। তার উপর যদি এমন অনিয়ম চলতে থাকে, তাহলে অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে পাঠাবেন।”
এই বিষয়ে স্থানীয় বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রতিমা বসাক জানান, “স্কুলটি নিয়ে কোনো অভিযোগের কথা আমি জানি না। যদি লিখিত অভিযোগ পাই, তাহলে অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” একই কথা বলেছেন পূর্ব মেদিনীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।