পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থায় চলমান দুর্নীতি এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের মতো ঘটনাকে হাতিয়ার করে আজ দুর্গাপুরের জনসভা থেকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “শিক্ষকদের চাকরি যাওয়ার জন্য দায়ী তৃণমূলের দুর্নীতি,” যা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয় হতে চলেছে।
দুর্গাপুরের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগাম সুর বেঁধে দেন। তিনি ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন, বঙ্গ বিজেপি কোন কোন ইস্যুকে সামনে রেখে শাসকদলকে আক্রমণ শানাবে। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মোদী রাজ্যের যুব সমাজের অসহায় অবস্থার জন্য সরাসরি রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ রাজ্যে যুবসমাজের যা অবস্থা তা বদলাতে হলে দরকার সরকারের পরিবর্তন। প্রাথমিক হোক বা উচ্চ প্রাথমিক সব নষ্ট করে দিচ্ছে এই রাজ্য সরকার। এই যে হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি গেল, তার কারণ তৃণমূলের এই দুর্নীতি। এর জন্য হাজার হাজার পরিবারের উপর সঙ্কট নেমে এসেছে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে মোদী কেবল চাকরি হারানো শিক্ষকদের কথাই নয়, তাদের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার পরিবারের দুর্দশাকেও তুলে ধরেন।
শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “শিক্ষকের অভাবে বর্তমানে স্কুলে যে লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া পড়ছে, তাদের ভবিষ্যতও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থা হয়েছে যে কোর্ট পর্যন্ত বলছে এটা সিস্টেমেটিক ফ্রড। তৃণমূল বাংলার যুবসমাজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ-কে সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।” এই ‘সিস্টেমেটিক ফ্রড’ শব্দটি ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী রাজ্য শিক্ষাব্যবস্থার গভীরে প্রবেশ করা দুর্নীতির প্রতি ইঙ্গিত করেন।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাংলাকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হিসেবে প্রধানমন্ত্রী “ডবল ইঞ্জিন সরকার”-এর সুবিধা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে হলে তৃণমূলকে সরান। বিজেপি সরকারে এলেই হবে বাংলার উন্নয়ন।” এই বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয়ের উপর জোর দেন এবং পরোক্ষভাবে বিজেপিকে ক্ষমতা আনার আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই বক্তব্য শিক্ষা দুর্নীতির মতো স্পর্শকাতর ইস্যুকে সামনে এনে ভোটারদের, বিশেষ করে বেকার যুবক এবং ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক পরিবারের সদস্যদের প্রভাবিত করার একটি কৌশল। নারীর সুরক্ষাহীনতার পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থার এই বেহাল দশা বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।