শান্তিপুরে পুতুল ঝুলন ফিরল ৪৫ বছর পর, আজকের প্রজন্মকে ঐতিহ্য চেনানোর উদ্যোগ

প্রায় ৪৫ বছর আগেকার ছেলেবেলার পুতুল ঝুলনের স্মৃতি আবারও জীবন্ত হয়ে উঠেছে শান্তিপুরে। তিন বন্ধু সত্যব্রত কুন্ডু, সঞ্জয় প্রামাণিক এবং মনা দাসের যৌথ উদ্যোগে তাঁদের বাড়ির বারান্দায় পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প। আজকের প্রজন্মকে ঝুলনের গুরুত্ব বোঝাতে এবং একটি হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই তাঁদের এই প্রয়াস।

যখন তাঁদের বয়স ছিল মাত্র এগারো থেকে তেরো বছর, তখন তাঁরা বিভিন্ন থিমের উপর ভিত্তি করে পুতুল দিয়ে অসাধারণ ঝুলন তৈরি করতেন। সেই সময় ছোটদের হিন্দি সিনেমা দেখার উপর অনেক পরিবারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই তাঁরা সিনেমার দৃশ্যগুলিকেই পুতুলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন। অমিতাভ বচ্চনের ‘অনুসন্ধান’ সিনেমার বিখ্যাত গানের দৃশ্য থেকে শুরু করে ভারত-চীন যুদ্ধ, শান্তিপুরের তাঁতশিল্প এবং বন্যপ্রাণীর জগৎ – সব কিছুই তাঁদের ঝুলনের অঙ্গ হয়ে উঠত। শান্তিপুরের প্রামাণিক বাড়ির বারান্দাতে ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট পুতুল নিয়ে বসতেন এবং সেখান থেকে পুতুল কিনে এনে তাঁরা এই দৃশ্যগুলি তৈরি করতেন।

পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষা, চাকরি এবং সংসারের ব্যস্ততা তাঁদের এই শখকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন তাঁরা আবার সেই দিনগুলো ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন। নিজেদের ছেলে-মেয়েদের এবং নতুন প্রজন্মকে এই ঝুলনের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য রথযাত্রার সময় থেকেই তাঁরা পুনরায় এই পুতুল ঝুলন চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। পাঁচ দিন ধরে এই ঝুলনের প্রদর্শনী চলবে।

তিন বন্ধুর এই উদ্যোগ দেখতে এখন এলাকার কচিকাঁচা, যুবক-যুবতী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ভিড় উপচে পড়ছে। একসময় প্রতিটি পাড়ায় ঝুলন প্রতিযোগিতা হতো, কে কতটা নিখুঁত এবং প্রাসঙ্গিক থিম তৈরি করতে পারে তা দেখার জন্য। যদিও আজকের ছোটদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না, তবুও এই তিন বন্ধুর প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে তাদের উৎসাহিত করবে। পুরোনো স্মৃতি উসকে কুন্ডু বাড়ির বারান্দায় এই ঝুলন দেখতে পেয়ে এলাকার প্রবীণরা খুবই আনন্দিত। এটি শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং পুরোনো দিনের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার একটি সফল প্রয়াস।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy