রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (RSS) শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে ফের একবার বড়সড় বিতর্ক তৈরি হলো। বুধবার কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের বিশেষ আয়োজনে, আরএসএস-এর অবদানের কথা তুলে ধরতে বিশেষ ডাকটিকিট ও ১০০ টাকার মুদ্রা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে তার বক্তৃতায় আরএসএস-এর ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান’ সংক্রান্ত দাবি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি: জন্মলগ্ন থেকেই দেশ নির্মাণে আরএসএস
অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি দাবি করেন, জন্মলগ্ন থেকেই আরএসএস দেশ নির্মাণের কাজে যুক্ত। তিনি বলেন, “স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পরমপূজ্য হেডগেওয়ার তাতে অংশ নেন। উনি অনেক বার জেলে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে সংগঠনের অনেকেই জেলে যান সেই সময়।”
মোদি আরও দাবি করেন, আরএসএস শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশই নেয়নি, বহু বিপ্লবীকেও আশ্রয় দিয়েছিল। ১৯৪২ সালে মহারাষ্ট্রের চিমুরে ইংরেজদের হাতে আরএসএস কর্মীদের উপর অত্যাচার করা হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, স্বাধীনতার পরও হায়দরাবাদের নিজাম এবং গোয়া ও দাদরা ও নগর হাভেলির স্বাধীনতায় আরএসএস আত্মবিসর্জন দিয়েছে। আরএসএস সবসময়ই ‘দেশ সর্বপ্রথম’ মন্ত্রে বিশ্বাসী এবং তাদের লক্ষ্য ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’।
তিনি অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পরেও আরএসএস-কে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। “ভুয়ো মামলায় পবিত্র গুরুজিকে (গোলওয়ালকর) ফাঁসানো হয়েছিল। জেলে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে,” বলেন মোদি।
ঐতিহাসিক নথি ও বিরোধীদের পালটা তোপ
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত ঐতিহাসিক নথি অনুযায়ী, ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’ থেকে আরএসএস দূরত্ব বজায় রেখেছিল বলেই জানা যায়।
কংগ্রেসের তোপ:
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রীর দাবির তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি সর্দার বল্লভভাই পটেলের লেখা একটি চিঠি তুলে ধরেছেন, যা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লেখা হয়েছিল। সেই চিঠিতে প্যাটেল মন্তব্য করেছিলেন যে, মহাত্মা গাঁধীর হত্যার পর দেশের পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যার জন্য আরএসএস-এর কাজকর্ম দায়ী ছিল। কংগ্রেসের তরফে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দাবি করা হয়, আরএসএস ভগৎ সিংহকে ‘নৈরাজ্যবাদী’ মনে করত এবং তারা ইংরেজ সরকারকে সাহায্য করত। দীর্ঘ ৫২ বছর আরএসএস তাদের সদর দফতরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি বলেও অভিযোগ করে কংগ্রেস।
সিপিএম এবং আপ-এর প্রতিক্রিয়া:
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবি সরাসরি অভিযোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। আরএসএস-এর ভাষ্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করছেন উনি।”
আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহ দাবি করেন, আরএসএস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয়দের ইংরেজদের সেনায় যোগ দিতে উৎসাহ জুগিয়েছিল। তার অভিযোগ, আরএসএস বিপ্লবীদের উপর গোপনে নজরদারি চালাত এবং জাতীয় পতাকার বিরোধী ছিল।
আরএসএস-এর শতবর্ষ উদযাপনের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই নয়া ইতিহাস-ব্যাখ্যা এবং তাকে ঘিরে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ – সব মিলিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এই নতুন বিতর্ক এখন দেশের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।