রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনেও বাড়ল না পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকল্পগুলির অন্যতম ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মাসিক অনুদান। রাজ্যের লাখ লাখ মহিলা যেখানে টাকা বাড়ানোর আশায় বুক বেঁধেছিলেন, সেখানে এই স্থিতাবস্থা এবং একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের খরচের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি করেছে।
আর্থিক শৃঙ্খলার রাশ টানছে নবান্ন?
সম্প্রতি রাজ্য সরকার রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশিকা জারি করা। নবান্নে অর্থ দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রতিটি দফতরকেই এখন খরচের ঊর্ধ্বসীমা মেনে চলতে হবে। সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকার বেশি কোনো দফতর খরচ করতে পারবে না, যা সরকারের আর্থিক সংকটের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
এই ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আর এই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের মহিলাদের প্রতি মাসে ৫০০ টাকা (বর্তমান অঙ্ক সম্ভবত ১৫০০ টাকা, যেমনটা আপনি আগের তথ্যে উল্লেখ করেছেন, তবে আপনার প্রদত্ত বর্তমান তথ্যে ১৫০0/১৮০০ টাকার উল্লেখ আছে) এবং পিছিয়ে পড়া মহিলাদের প্রতি মাসে ১০০০ টাকা (আপনার প্রদত্ত তথ্যে ১৮০০ টাকার উল্লেখ আছে) করে দেওয়া হয়। এই প্রকল্পটি নিঃসন্দেহে তৃণমূল সরকারের জনপ্রিয়তার অন্যতম স্তম্ভ।
চাপের মুখে কল্যাণমুখী প্রকল্প?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রকল্পের ভার রাজ্য সরকার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ায় এবং কেন্দ্র থেকে বকেয়া তহবিল না মেলায় রাজ্যের কোষাগারের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক, আবাস, ১০০ দিনের কাজ-সহ বহু প্রকল্প এখন রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে চালাচ্ছে, যা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মতো প্রকল্পে খরচের ওপর প্রভাব ফেলছে। অর্থসচিব প্রভাতকুমার মিশ্রের সই করা নির্দেশিকায় প্রতিটি প্রকল্পের ছাড়পত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপদেষ্টার অনুমোদন বাধ্যতামূলক করার কথাও বলা হয়েছে, যা ব্যয় নিয়ন্ত্রণেরই একটি অংশ।
ভোটের রাজনীতিতে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’
যদিও ২০২৬ সালে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে, তাই অনেকেই মনে করছেন, ভোট বড় বালাই। এই পরিস্থিতিতে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ বা এই জাতীয় জনকল্যাণমুখী প্রকল্পে সরাসরি কাটছাঁট করার ঝুঁকি সরকার নেবে না। তবে, অন্তত স্বল্পমেয়াদে এর অনুদান বাড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছেন অনেকেই। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত কি শুধুই আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতিফলন, নাকি জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলোর গতি কিছুটা শ্লথ করার ইঙ্গিত – তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মহিলা ভোটাররা অবশ্য এখনও আশা ছাড়তে নারাজ, কারণ তাদের কাছে এই প্রকল্প কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, এটি ‘মমতা সরকার’-এর একটি প্রতিশ্রুতি।