মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবি উড়িয়ে দিয়ে ভারতীয় সূত্রগুলো শনিবার জানিয়েছে, ভারতীয় সংস্থাগুলি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম, তেলের গুণগত মান, মজুত ভাণ্ডার, সরবরাহ প্রক্রিয়া এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, ভারত নাকি রাশিয়ার কাছ থেকে আর তেল কিনবে না বলে তার কাছে খবর আছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের এই পদক্ষেপকে তিনি ‘ভালো পদক্ষেপ’ হিসেবেও অভিহিত করেন। যদিও এই বিষয়ে কোনো নতুন পরিবর্তন হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে তার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলেও জানান ট্রাম্প।
শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারতীয় সূত্রের দাবি, রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী দেশ। প্রতিদিন প্রায় ৯.৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে তারা, যা বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ। একই সঙ্গে রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশও, প্রতিদিন প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল এবং ২.৩ মিলিয়ন ব্যারেল পরিশোধিত পণ্য রফতানি করে থাকে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কায় মস্কো ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৩৭ মার্কিন ডলার ধার্য করেছিল।
জাতীয় স্বার্থে জ্বালানি নিরাপত্তা:
ভারতের একাধিক সূত্রের দাবি, “ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি উপভোক্তা দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৮৫ শতাংশ অশোধিত তেল আমদানি করতে হয়। এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে এবং নিজেদের আয়ত্তের মধ্যে সুকৌশলে জ্বালানি আমদানি করছে দেশ।”
গত বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেন, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এর পাশাপাশি, রাশিয়া থেকে অস্ত্র এবং তেল কেনার জন্য ভারতের উপর জরিমানা আরোপের কথাও জানান তিনি। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ভারতীয় সংস্থাগুলি রুশ তেল কেনা স্থগিত করে দিয়েছে বলে জল্পনা শুরু হয়েছিল।
এই বিষয়ে শুক্রবার সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এবং তৎকালীন সময়ে বিশ্বের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে তেল কেনার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিই। তবে, আপনাদের প্রশ্নের যোগ্য জবাব আমার কাছে নেই।”
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও দায়িত্বশীল ভূমিকা:
এই আবহে রাশিয়ার তেল আমদানির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ভারতীয় সূত্রগুলো জানায়, রাশিয়ার তেলের উপর কখনোই কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। বরং, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ অব্যাহত রাখতে রাজস্ব সীমিত করার জন্য জি৭ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির দ্বারা এর মূল্য নির্ধারণের অন্তর্গত করা হয়। সূত্রগুলো আরও জানায় যে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারত বরাবরই একটি দায়িত্বশীল জ্বালানি উপভোক্তা হিসেবে কাজ করে আসছে। দেশ তথা দেশবাসীর স্বার্থ মেনে জ্বালানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।