আধুনিক ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ নামে পরিচিত বেঙ্গালুরু শহরের এক বীভৎস ও অমানবিক চেহারা দেখল দেশ। রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ল এক শিউরে ওঠা দৃশ্য— মাঝরাস্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ছটফট করছেন বছর চৌত্রিশের এক যুবক, আর তাঁর রক্তাক্ত স্ত্রী রাস্তায় হাঁটু গেড়ে হাতজোড় করে একের পর এক গাড়ির কাছে সাহায্য চাইছেন। কিন্তু অমানবিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন রেখে একটি গাড়িও থামল না সেই রাতে।
হাসপাতালের দরজায় দরজায় লড়াই: শনিবার রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ বনশঙ্করীর বাসিন্দা ভেঙ্কটারামন (৩৪) বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। স্ত্রী রূপা সময় নষ্ট না করে স্বামীকে স্কুটির পিছনে বসিয়েই ছোটেন হাসপাতালে। অভিযোগ, প্রথম হাসপাতাল জানায় চিকিৎসক নেই, দ্বিতীয় নার্সিংহোম ইসিজি করে হার্ট অ্যাটাকের কথা বললেও প্রাথমিক চিকিৎসা বা অ্যাম্বুল্যান্স— কিছুই দেয়নি। নিরুপায় রূপা ওই অবস্থাতেই স্কুটিতে স্বামীকে নিয়ে জয়দেব হাসপাতালের দিকে রওনা দেন।
রাস্তায় আছড়ে পড়লেন দম্পতি: ভোর ৪টে ২১ নাগাদ যন্ত্রণার চোটে স্কুটির ওপর ভারসাম্য হারান ভেঙ্কটারামন। রাস্তায় আছড়ে পড়েন দম্পতি। রূপা নিজে জখম ও রক্তাক্ত হওয়া সত্ত্বেও রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে একের পর এক বাইক ও গাড়ির সামনে হাতজোড় করে সাহায্য চান। কিন্তু কেউ দাঁড়ায়নি। দীর্ঘ ১০ মিনিট পর এক ক্যাব চালক এগিয়ে এলেও ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভেঙ্কটারামনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
শোকের মধ্যেও অনন্য মানবিকতা: স্বামীকে হারানো রূপা নিজের শোকের মুহূর্তেও হারাননি মানবিকতা। তিনি সিদ্ধান্ত নেন মৃত স্বামীর চক্ষুদান করার। রূপার প্রশ্ন, “হয়তো বেসরকারি হাসপাতালগুলো ভেবেছিল আমাদের টাকা নেই, তাই অ্যাম্বুল্যান্স দেয়নি। কিন্তু মানুষ কেন এতটা নির্দয় হলো? একটু আগে সাহায্য পেলে হয়তো সন্তানদের মাথা থেকে বাবার হাতটা উঠত না।”
সরকারের কাছে আর্তনাদ: ভেঙ্কটারামন পেশায় গ্যারেজ মেকানিক ছিলেন। রেখে গেলেন ৫ বছর ও ১৮ মাসের দুটি নাবালক সন্তানকে। শোকাতুর মা প্রশ্ন তুলেছেন, “জরুরি চিকিৎসা কেন সরকারি নজরদারিতে থাকে না? আমার বৌমা আর বাচ্চা দুটোর দায়িত্ব কে নেবে?”
বেঙ্গালুরুর এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, প্রযুক্তিতে এগোলেও সমাজ হিসেবে আমরা কতটা পিছিয়ে পড়েছি।