রানিগঞ্জে ফের ধসের আতঙ্ক! ভোরে বিকট শব্দে ভেঙে পড়ল ভূগর্ভস্থ খনিমুখ, আতঙ্ক বাড়াচ্ছে পাশের রেললাইন

ভোরের শান্তিতে আচমকা প্রলয়! শুক্রবার ভোররাতে রানিগঞ্জের চলবলপুর বাদকুঠি এলাকায় ভয়াবহ ধস নেমেছে, যা এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক তৈরি করেছে। জোরে শব্দ শুনে প্রাথমিকভাবে কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও, দিনের আলো ফুটতেই সামনে আসে এক ভয়ঙ্কর চিত্র – মাটির গভীরে ঢুকে গেছে একটি পুরনো খনির মুখ, যার আশেপাশে ঘনবসতি এবং গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন।

ভূগর্ভস্থ বিপদের পুনরাবৃত্তি
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধস নামা স্থানটিতে অতীতে ইসিলের শ্রীপুর বা সাতগ্রাম এরিয়ার ‘বাদকুঠি’ নামে একটি পুরনো কয়লা খনি ছিল। বহু বছর আগেই সেখান থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ইসিএল কর্তৃপক্ষ সেই খনির চানক (খনিমুখ) সিল করে দিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার ভোরবেলায় যে প্রচণ্ড শব্দ শোনা যায়, তার উৎস খুঁজতে গিয়ে এলাকাবাসীরা দেখেন, ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে বিরাট আকারের এক ধস নেমেছে। ধসের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ প্রায় ৪০ ফুট এবং গভীরতা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ফুট। এই ধসেই পুরনো কোলিয়ারির গোটা চানকটি মাটির তলায় ঢুকে গেছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।

জনবসতি ও রেললাইনের ওপর চরম ঝুঁকি
সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হলো, এই ধসের স্থান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে জনঘনবসতি। প্রায় ৫০টি পরিবার সেখানে বাস করে। স্থানীয় বাসিন্দা পৃথিবী বাউরি আতঙ্কের সঙ্গে জানান, “ভোরবেলায় ফুল তুলতে গিয়ে ধসের শব্দ শুনি। তখন বুঝতে পারিনি। পরে শুনলাম বিরাট আকারে ধস নেমেছে। ধস বাড়তে বাড়তে আমাদের বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। কোনোমতে একটি ছোট বাড়ি করতে পেরেছিলাম। এখন আমরা উঠে কোথায় যাব?” আরেক বাসিন্দা রাজা রাম যোগ করেন, “পাড়ার মধ্যেই এত বড় একটা গর্ত। আমাদের শিশু সন্তানরা রয়েছে। ধস যদি বাড়ির দিকে এগিয়ে আসে, তাহলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বাড়িতে ফাটল ধরেছে।”

শুধু তাই নয়, ধসের স্থান থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরেই রয়েছে হাওড়া-দিল্লি মেইন রেললাইন। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য দূরপাল্লার ট্রেন যাতায়াত করে। ধস ক্রমেই বাড়ছে বলে বাসিন্দারা জানানোয়, ট্রেনের নিরাপত্তা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। বড়সড় দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ইসিএল কর্তৃপক্ষের নিরুত্তর ভূমিকা
ঘটনার খবর পেয়েই ইসিএলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। তবে, তারা এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসিএল আধিকারিক বলেছেন, “আমরা সম্পূর্ণ বিষয়টি আগে পর্যবেক্ষণ করি, তদন্ত করি, ম্যাপ দেখে চিহ্নিত করি জায়গাটি কাদের ছিল। তারপরেই আমরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব।” আপাতত ধসটিকে বুজিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে ইসিএলের এই নীরবতা এলাকাবাসীর ক্ষোভ আরও বাড়াচ্ছে। বিগত দিনে রানিগঞ্জে বারবার ধসের ঘটনা ঘটেছে, যা অনেক সময় প্রাণহানির কারণও হয়েছে। এবারের ধস কোনো প্রাণহানি না ঘটালেও, এর ব্যাপকতা এবং ঘনবসতি ও রেললাইনের নৈকট্য এলাকার মানুষকে চরম উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বড় বিপদ আসন্ন, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy