ফের কলকাতার নিরাপত্তা নিয়ে উঠল প্রশ্ন। ভিনরাজ্যে বড় ধরনের অপরাধ করে পশ্চিমবঙ্গে গা-ঢাকা দেওয়ার প্রবণতা যেন থামছেই না। রাজস্থানের এক ব্যবসায়ীকে খুন করে কলকাতায় এসে লুকিয়ে থাকার ছক কষা গুজরাতের চার কুখ্যাত দুষ্কৃতীর মধ্যে তিনজনকে অবশেষে পাকড়াও করল কলকাতা পুলিশ। তবে সল্টলেকের অভিজাত আবাসনে এই দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব ছিল যেন হলিউডের অ্যাকশন সিনেমার দৃশ্য!
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের ফুলবাগান ও পূর্বাচল আবাসন সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশের গুণ্ডা দমন শাখা (Anti-Rowdy Section)। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজস্থানের কুচমান এলাকার এক ব্যবসায়ীকে খুন করার পর ওই চার দুষ্কৃতী কলকাতায় এসে অন্য কোনও দেশে বা রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল।
ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ল খুনি: অধ্যাপকের সাহসিকতা
পুলিশি অভিযান শুরু হতেই ফুলবাগান এলাকা থেকে প্রথমে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সময় আরেক দুষ্কৃতী পালাতে শুরু করে। তাড়া খেয়ে সে সল্টলেকের পূর্বাচল আবাসনের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে পড়ে। এরপর সোজা M বিল্ডিং-এর আবাসিক, বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপক অঙ্কুর ভাওয়ালের ফ্ল্যাটের মধ্যে জোর করে ঢুকে যায়।
অধ্যাপক অঙ্কুর ভাওয়াল জানান, “তখন প্রায় রাত সাড়ে আটটা। হঠাৎ দেখি ফ্ল্যাটের মধ্যে একটা লোক ঢুকে পড়েছে। দেখেই মনে হচ্ছিল লোকটা ভালো নয়, তাড়া খেয়ে এসেছে। তারপর ওকে বলি আপনি বেরিয়ে যান। কোনওক্রমে বের করে দিতে পারলাম।”
ছাদ থেকে কার্নিশ টপকে পালানোর চেষ্টা
ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে ওই খুনি সরাসরি আবাসনের M বিল্ডিংয়ের ছাদের গেট ভেঙে চলে যায় পাশের L বিল্ডিংয়ের ছাদে। সেখান থেকে জীবন বাজি রেখে সে কার্নিশে নামতে শুরু করে! এক বাসিন্দা তাঁকে দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। ততক্ষণে পুলিশ আবাসনে পৌঁছে গিয়েছে। দুষ্কৃতী কার্নিশ বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করার সময়ই তাকে পাকড়াও করে পুলিশ।
মোট ৩ জনকে গ্রেফতার করা গেলেও, চতুর্থ দুষ্কৃতী এখনও পলাতক। পুলিশ মনে করছে, সে সল্টলেকের পূর্বাচল আবাসনের আশেপাশেই লুকিয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। চতুর্থ দুষ্কৃতীর খোঁজে চলছে জোরদার তল্লাশি।
অভিযুক্তদের হেফাজতে নিতে চায় রাজস্থান পুলিশ
কলকাতা পুলিশের তরফে ইতিমধ্যেই রাজস্থান পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রাজস্থান পুলিশ হেফাজতে নিতে চায় এই অভিযুক্তদের। দ্রুত রাজস্থান পুলিশ কলকাতায় পৌঁছলে, ধৃতদের তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে খবর।
উল্লেখ্য, এই প্রথম নয়। চলতি বছরের জুলাই মাসেও পাটনার হাসপাতালের কেবিনে গুলি করে খুনের ঘটনা ঘটিয়ে কলকাতায় গা-ঢাকা দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সেই সময় নিউটাউনের সাপুরজির সুখবৃষ্টি আবাসনে যৌথ অভিযান চালিয়ে বিহার পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল ও রাজ্য পুলিশের STF দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল।