রাজস্থানে কাশির সিরাপ নিয়ে চরম কড়াকড়ি! ডেক্সট্রোমেথরফান শুধু ডাক্তারের পরামর্শেই, নির্দেশিকা জারি স্বাস্থ্য দফতরের

ভরতপুর এবং সিকারে ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড (HBr) কাশির সিরাপ খাওয়ার পর দুই শিশুর গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে রাজস্থান স্বাস্থ্য বিভাগ। রাজ্য সরকার এই ঘটনায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি একটি কড়া পরামর্শ জারি করেছে।

এখন থেকে রাজস্থানে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের কাশির সিরাপ কেনা যাবে না।

নির্দেশিকা জারি: প্রোটোকল মানতেই হবে
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগ সব ডাক্তার ও ফার্মাসিস্টদের জন্য একটি কড়া পরামর্শ জারি করেছে:

প্রেসক্রিপশন আবশ্যক: শুধুমাত্র চিকিৎসকের লেখা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ীই ওষুধ সরবরাহ করতে হবে।

চিকিৎসা পরামর্শ ছাড়া নয়: রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে।

শিশুদের জন্য বিশেষ প্রোটোকল: শিশুদের ওষুধ লেখার সময় নির্ধারিত প্রোটোকল সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে।

ডাক্তার-ফার্মাসিস্ট বরখাস্ত
তদন্তে সামনে এসেছে যে, সিকার জেলার হাতিদেহ পিএইচসি-তে এক শিশুকে নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ লিখে দেওয়া হয়েছিল। এই গুরুতর গাফিলতির অভিযোগে পিএইচসি-র ডাক্তার পলক এবং ফার্মাসিস্ট পাপ্পু সোনিকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিভাগ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং খিনভসার-এর নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রশ্নবিদ্ধ ওষুধের নমুনা পরীক্ষার জন্য রাজ্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আরএমএসসিএল (RMSCL) এই ওষুধের বিতরণ ও ব্যবহার ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি: ডাক্তাররা লেখেননি ডেক্সট্রোমেথরফান
জনস্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ রবি প্রকাশ শর্মা নিশ্চিত করেছেন যে, তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ আছে— ডাক্তার কোনও শিশুকেই ডেক্সট্রোমেথরফান HBr সিরাপ লিখে দেননি। শিশুদের জন্য এই ওষুধ দেওয়া প্রোটোকল-বিরোধী।

সিকরের ঘটনা: সিকরের খোরি গ্রামের শিশু নিত্যাংশের মৃত্যুর বিষয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডাক্তার তাকে এই সিরাপ দেননি। বরং, ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে শিশুটির মা বাড়িতে আগে থেকে মজুত করা ৫ মিলি ডেক্সট্রোমেথরফান কাশির সিরাপ খাইয়ে দেন। শিশুটি এরপর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ভরতপুরের ঘটনা: ভরতপুরের শিশু গগনের বাবা ২৫ সেপ্টেম্বর কাশি, সর্দি ও জ্বরের জন্য এই সিরাপ পান। পরে ডাক্তারকে না জানিয়েই তিনি তাঁর তিন বছরের অসুস্থ ছেলেকে সিরাপটি খাওয়ান। যদিও গগনকে সময়মতো হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর তার অবস্থার উন্নতি হয় এবং তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সম্রাটের মৃত্যু: ভরতপুরে কাশির সিরাপ খেয়ে অন্য যে শিশুর (সম্রাট) মৃত্যুর খবর এসেছিল, তার মৃত্যু নিউমোনিয়ার কারণে হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

সরকারের রিপোর্টে এটি স্পষ্ট যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসককে না জানিয়ে বা বাড়িতে মজুত থাকা ওষুধ খাওয়ানোর ফলেই বিপত্তি ঘটেছে। এই ঘটনা স্বাস্থ্য পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়ার বিপদ সম্পর্কে মানুষকে আরও একবার সতর্ক করল।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy