মেদিনীপুরের রাজনীতিতে এক যুগের অবসান ঘটল। টানা ২৩ বছর সিপিএমের জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব সামলানো বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তথা অধ্যাপক দীপক সরকার ৮৫ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে প্রয়াত হয়েছেন। সোমবার গভীর রাতে মেদিনীপুর শহরের বিধাননগরে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কমিউনিস্ট নেতা।
মঙ্গলবার তাঁর মরদেহ জেলা পার্টি অফিসে নিয়ে আসা হয়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ-সহ দলের বহু নেতা-কর্মী তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
বাম নেতাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন
এদিন মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, “এ অপূরণীয় ক্ষতি। তবে কালের নিয়মে সবাইকেই চলে যেতে হবে। শ্রদ্ধা রইল কমরেডের প্রতি।”
অন্যদিকে, বাম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র প্রয়াত নেতার দক্ষতার কথা তুলে ধরে বলেন, “একসময় অখণ্ড মেদিনীপুরের সঙ্গী ছিলেন দীপক সরকার। তাঁর আমলে বামেরা সবচেয়ে বেশি দক্ষতা লাভ করেছিল জেলায়। তিনি রাজনীতিতে ছিলেন সুদক্ষ একজন রাজনীতিবিদ। সঙ্গীর প্রতি রইল শ্রদ্ধা।”
তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, দীপক সরকারের দেহ দান করা হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
অধ্যাপনা থেকে একছত্র রাজত্ব
অধ্যাপক দীপক সরকার তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন নির্মল হৃদয় আশ্রমের শিক্ষক হিসেবে। এরপর তিনি মেদিনীপুর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপনা করেন। সুকুমার সেনগুপ্তের হাত ধরে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন এবং ১৯৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পান।
জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব: তিনি ১৯৯২ সাল থেকে টানা ২০১৫ সাল পর্যন্ত জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ সাল পর্যন্ত ছিলেন অখণ্ড মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক এবং এরপর হন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক।
বাম দুর্গের স্থপতি: তাঁর সময়েই অখণ্ড মেদিনীপুরে বামেদের একছত্র রাজত্ব ছিল। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র কায়েমের অভিযোগও উঠেছিল সেই সময়।
অন্যান্য অবদান: খেলাধুলোর প্রতি উদ্যোগী হয়ে তিনি স্পোর্টস কমপ্লেক্স চালু করেছিলেন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, বিদ্যাসাগর ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (প্যারামেডিক্যাল কলেজ), এবং মেদিনীপুর স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাডেমি গড়ে ওঠার নেপথ্য কারিগর ছিলেন তিনি।
বামেরা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কঙ্কাল কাণ্ডের সঙ্গে তাঁর নাম জড়ালেও পরে তা নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ হয়নি। ২০১৫ সালে তিনি পার্টির নিয়ম মেনে জেলা সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেও ২০২২ সাল পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন এবং সক্রিয় কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন।