জম্মু ও কাশ্মীর সফর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানের পর, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘মুসলিম অধ্যুষিত’ এলাকা পরিদর্শনে বিরত থাকার কার্যত ফতোয়া জারি ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস (AITC) শুভেন্দুর এই মন্তব্যকে ‘লজ্জাজনক, সুপরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উস্কানি’ বলে তীব্র আক্রমণ করেছে, যা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির ওপর আঘাত হানছে বলে তাদের অভিযোগ।
বিতর্কের সূত্রপাত হয় যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং রাজ্যের জনগণকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি পরিদর্শনের আহ্বান জানান। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, এই যুক্তিতেই মমতা নিজে পুজোর পর কাশ্মীর সফরের ইঙ্গিত দেন।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ঠিক পরেই শুভেন্দু অধিকারী বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন। তিনি রাজ্যের জনগণকে স্পষ্ট ভাষায় ‘মুসলিম অধ্যুষিত’ এলাকায় না যাওয়ার আবেদন করেন। তাঁর উক্তি ছিল, “যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি সেখানে যেও না। কাশ্মীরে যেতে চাইলে জম্মুতে যান। যেও না… তারা (সন্ত্রাসবাদীরা) ধর্ম জিজ্ঞাসা করে মানুষকে হত্যা করেছে। যেতে চাইলে হিমাচল যান, আমাদের দেবভূমি উত্তরাখণ্ড আছে, ওড়িশায় যান, সারা দেশ… আমি বাঙালিদের বলতে চাই যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি সেখানে যেও না। আপনার জীবনকে প্রাধান্য দিন। আপনার সন্তান, বোন, মাকে বাঁচান।”
শুভেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যকে তীব্র আক্রমণ করে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে লেখে, “গতকাল, শ্রীমতী @MamataOfficial মুখ্যমন্ত্রী @OmarAbdullah এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং জনগণকে জম্মু ও কাশ্মীর পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু @BJP4India এর নেতারা যেমন @SuvenduWB প্রকাশ্যে জনগণকে জম্মু ও কাশ্মীর পরিদর্শন থেকে নিরুৎসাহিত করছেন।”
তৃণমূলের পোস্টে আরও বলা হয়েছে, “কাশ্মীরের অর্থনীতিকে অচল করার জন্য সন্ত্রাসবাদীরা পহেলগাঁওতে হামলা চালিয়েছে, এবং শুভেন্দু তাদের ঠিক সেই ব্যবস্থাই করে দিচ্ছেন যা জঙ্গিরা করতে চেয়েছিল। এটি একটি লজ্জাজনক, সুপরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উস্কানি। এই বিজেপিই সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি মুছে ফেলতে চায়। এই ধরনের বক্তব্যের একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোন স্থান নেই। আমরা বিজেপিকে ভারতীয়দের মধ্যে সেতু পুড়িয়ে দিতে দেব না। কাশ্মীরে নয়। বেঙ্গলে নয়। কোথাও নয়।”
শাসক দলের এই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যকে ঘিরে এক নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একদিকে যখন রাজ্য সরকার কাশ্মীরে স্বাভাবিকতা ফেরানোর বার্তা দিয়ে পর্যটনকে উৎসাহিত করতে চাইছে, তখন বিরোধী দলনেতার এমন বিভেদকামী মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলল। শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্য দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর প্রতি বিজেপির অবস্থান নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে, যা আগামী দিনে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে আরও চাপানউতোর সৃষ্টি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।