সরকারি স্কুলে মিড-ডে মিল বিতরণের সময় স্বাস্থ্যবিধি এবং খাদ্য সুরক্ষার চরম লঙ্ঘনের এক ঘটনা ছত্তিশগড়ের বালোদাবাজার জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পালারি ব্লকের লচ্ছনপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রান্না করা খাবারে একটি কুকুরের মুখ দেওয়ার পরও সেই খাবার নির্বিঘ্নে প্রায় ৮৪ জন ছাত্রছাত্রীর প্লেটে পরিবেশন করা হয়েছে বলে অভিযোগ, যা রাজ্যের মিড-ডে মিল কর্মসূচির মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৯শে জুলাই, যখন মিড-ডে মিলের জন্য প্রস্তুত করা সবজিতে একটি বেওয়ারিশ কুকুর মুখ দেয়। শিক্ষার্থীরা দ্রুত এই বিষয়টি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নজরে আনলেও, আশ্চর্যজনকভাবে এবং শিক্ষকদের নিষেধ সত্ত্বেও, মিড-ডে মিল প্রস্তুতকারী স্বনির্ভর গোষ্ঠী সেই খাবারই শিশুদের মধ্যে বিতরণ করে। এই চরম গাফিলতি শিশুদের স্বাস্থ্যকে সরাসরি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
খবরটি শিশুদের মাধ্যমে অভিভাবকদের কানে পৌঁছাতে দেরি হয়নি। মুহূর্তেই স্কুল চত্বরে তীব্র উত্তেজনা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভিভাবক এবং স্থানীয় গ্রামবাসীরা সংঘবদ্ধ হয়ে স্কুলে আসেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ঝলেন্দ্র সাহুও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঘটনার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে, প্রায় ৭৮ জন শিশুকে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কেবলমাত্র সতর্কতা হিসেবে তাদের সকলকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। লচ্ছনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ইনচার্জ ডাঃ বীণা ভার্মা নিশ্চিত করেছেন যে, “কোনো সংক্রমণ ধরা পড়েনি, শুধুমাত্র সাবধানতার জন্য এই টিকা দেওয়া হয়েছে।” যদিও এই টিকা অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের অনুরোধে দেওয়া হয়েছে, তবুও সুস্থ শিশুদের এই ধরনের টিকা দেওয়ার নির্দেশ কোথা থেকে এলো, তা নিয়ে পরবর্তীতে প্রশ্ন উঠেছে, যা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে স্থানীয় এসডিএম দীপক নিকুঞ্জ, ব্লক শিক্ষা অফিসার নরেশ ভার্মা এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। তাঁরা শিক্ষক, অভিভাবক, পড়ুয়া এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ সংগ্রহ করেন। তবে, তদন্তের সময় মিড-ডে মিল প্রস্তুতকারী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের অনুপস্থিতি তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং জবাবদিহিতার অভাবকে আরও প্রকট করেছে।
আঞ্চলিক বিধায়ক সন্দীপ সাহু ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেব সাইকে চিঠি লিখে এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বিশেষ করে, শিশুদের জলাতঙ্ক টিকা দেওয়ার নির্দেশনার উৎস সম্পর্কে তদন্তের দাবি তুলেছেন। এই ঘটনাটি শুধু একটি বিদ্যালয়ের গাফিলতি নয়, বরং রাজ্যজুড়ে মিড-ডে মিল কর্মসূচির বাস্তবায়ন, তদারকি এবং স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত প্রোটোকলের দুর্বলতাকে তুলে ধরেছে। শিশুদের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রশাসনের আরও কঠোর এবং দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।