“মা কী ছিলেন, মা কী হইয়াছেন”-বাংলার শিল্প-অতীত স্মরণ করিয়ে TMC কে আক্রমণ মোদীর

পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-ঐতিহ্যের সঙ্গে বর্তমানের ‘বিধ্বস্ত’ অবস্থার তুলনা টেনে আজ দুর্গাপুরের জনসভা থেকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একসময় যে বাংলা ছিল ভারতের শিল্পের পথপ্রদর্শক, তাকে ‘সিন্ডিকেট রাজ’-এর কারণে শিল্পহীন ও কর্মহীন করার জন্য তিনি সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করেন। একইসাথে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাকে দেশের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বাংলার গৌরবময় শিল্প ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, একসময় হাওড়াকে ‘প্রাচ্যের শেফিল্ড’ বলা হতো, যেখানে গঙ্গার দুই তীরে হাজার হাজার শ্রমিক বড় বড় কারখানায় কাজ করতেন। বড় বড় বাঙালি উদ্যোগপতিরা ছিলেন, এবং কলকাতা ছিল দেশের প্রায় সমস্ত প্রধান কোম্পানির সদর দফতর। মোদী আক্ষেপ করে বলেন, “এই রাজ্যে সব আছে। নদী আছে, সমুদ্র আছে। এক সময়ে আমদানি, রপ্তানির শীর্ষে ছিল বাংলা। আজ, সব উদ্যোগপতিরা রাজ্য ছেড়ে পালাচ্ছেন।”

কেন এই পতন? এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তৃণমূলকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, “তৃণমূল এখানে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ব্যবসায়ীদের ধমকায়-চমকায়। পয়সা তোলে।” তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূলের গুন্ডা ট্যাক্সের জন্যই এখানে শিল্প আসে না।” এর ফলে একসময় বাণিজ্যে দিশা দেখানো বাংলার যুবকদের এখন ছোট কাজের জন্যও অন্য রাজ্যে যেতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগাম সুর বেঁধে দিয়ে বলেন, “বিজেপিকে একবার ক্ষমতায় আনুন। বাংলা হবে দেশের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ রাজ্য। এটা মোদীর গ্যারান্টি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে কর্মসংস্থান হয় এবং বিনিয়োগ আসে। কিন্তু “তৃণমূল থাকলে এসব হবে না।” এই প্রেক্ষাপটে তিনি নতুন স্লোগানও দেন: “তৃণমূল হঠাও, বাংলা বাঁচাও।”

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়েও প্রধানমন্ত্রী সরব হন। তিনি মুর্শিদাবাদে সংশোধিত ওয়াকফ আইন বিরোধী আন্দোলনে পিতা-পুত্র খুনের ঘটনা এবং বাড়িঘরে আগুন, লুটপাটের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। মোদী প্রশ্ন তোলেন পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে এবং অভিযোগ করেন, “হুমকির রাজনীতি করে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদের মতো ঘটনা ঘটলে এখানকার পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করে। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।” তাঁর দৃঢ় মত, “তৃণমূলকে সরাতেই হবে। তবেই আসল উন্নয়ন হবে পশ্চিমবঙ্গে।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই আক্রমণ একদিকে যেমন বাংলার অতীত গৌরবকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বর্তমানের সঙ্গে তুলনা টেনেছেন, তেমনি অন্যদিকে শিল্পহীনতা এবং আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিকে সামনে এনে ভোটারদের সহানুভূতি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। তাঁর ‘গ্যারান্টি’ এবং ‘তৃণমূল হঠাও, বাংলা বাঁচাও’ স্লোগান আসন্ন নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রচারের মূল স্তম্ভ হতে চলেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy