ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) তাদের মুদ্রানীতি কমিটির (এমপিসি) বৈঠকে রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে ঋণগ্রহীতাদের উপর নতুন করে ঋণের বোঝা বাড়ছে না। আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা মঙ্গলবার এমপিসি বৈঠকের ফলাফল ঘোষণা করার সময় এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা বলেন, “এবার রেপো রেটে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।” বর্তমানে রেপো রেট ৫.৫০ শতাংশে অপরিবর্তিত রয়েছে। এর আগে টানা তিনটি বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক ঋণ যেমন গৃহ ঋণ, গাড়ি ঋণ বা ব্যক্তিগত ঋণের ইএমআইয়ের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। অর্থাৎ, ইএমআই কমবেও না, আবার নতুন করে বাড়বেও না।
ভারতের অর্থনীতির অগ্রগতি এবং রিজার্ভ ব্যাংকের পদক্ষেপ:
এমপিসি সভার ফলাফল ঘোষণা করে গভর্নর জানান যে, ভারতের অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্নতির পথে এগোচ্ছে। উৎসবের মরশুমে অর্থনীতি আরও গতি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে, আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে শুল্ক নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা ও বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরবিআই সতর্কতামূলক অবস্থান নিয়েছে। গভর্নর বলেন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক সম্পর্কিত চিত্র সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না।
রেপো রেট কী এবং এর প্রভাব:
রেপো রেট হলো সেই সুদের হার, যার ভিত্তিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়। এই রেপো রেটের ওঠানামা সরাসরি ঋণের ইএমআইকে প্রভাবিত করে। যখন রেপো রেট কমে, তখন ব্যাংকগুলোর ঋণ নেওয়ার খরচ কমে যায় এবং তারা গ্রাহকদের জন্য ঋণের সুদের হার কমিয়ে দেয়। এর ফলে গৃহ ঋণ, গাড়ি ঋণ এবং ব্যক্তিগত ঋণের ইএমআই কমে যায়। একইভাবে রেপো রেট বাড়লে ঋণের ইএমআই বেড়ে যায়।
জিডিপি নিয়ে আরবিআইয়ের পূর্বাভাস:
রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির বিষয়ে আশাবাদী পূর্বাভাস দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমান করেছে যে ২০২৬ আর্থিক বছরে ভারতের জিডিপি ৬.৫ শতাংশ হতে পারে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এটি প্রথম ত্রৈমাসিকে ৬.৫%, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৬.৭%, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৬.৬% এবং চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ৬.৩% থাকবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এছাড়াও, আগামী অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৬ শতাংশ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পূর্বাভাস ভারতের অর্থনীতির প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আস্থার প্রতিফলন।