কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে বিতাড়িত হয়েছিলেন। কিন্তু অবশেষে মানবিকতার জয় হলো। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত রাখসন্দা রাশিদকে (৬৫) ভারতে ফিরে স্বামী ও প্রিয়জনদের কাছে আসার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আদালতকে জানিয়েছে, যার পর লাদাখ হাইকোর্ট তার মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে।
রাখসন্দা রশিদ জন্মসূত্রে পাকিস্তানের নাগরিক। ৩৫ বছর আগে তিনি জম্মুর বাসিন্দা জহুর আহমেদকে বিয়ে করে ভারতে চলে আসেন এবং এরপর থেকে তার চার সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে জম্মুতেই বসবাস করছিলেন। একটি পাকিস্তানি পরিবার প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে ভারতের মাটিতে বসবাস করছিল, তাদের জীবন যেন সাধারণ ভারতীয়দের মতোই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পহেলগামে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি হঠাৎই বদলে যায়।
আকস্মিক বিতাড়ন ও আইনি লড়াই:
পহেলগাম হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় এবং সকল পাকিস্তানি নাগরিককে দেশ ছাড়ার নির্দেশ জারি করে। এর জেরেই ২৮ এপ্রিল রাখসন্দাকে ‘লিভ ইন্ডিয়া নোটিস’ ধরিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ, তার ভিসার মেয়াদ তখনও ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ ছিল এবং তিনি নবায়নের আবেদনও করেছিলেন।
কেন্দ্রের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে রাখসন্দা লাদাখ হাইকোর্টে মামলা করেন। কিন্তু আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ পাওয়ার আগেই তাকে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার স্বামী জহুর আহমেদ জানান, এই কয়েকমাস তাদের পুরো পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল।
আদালতে কেন্দ্রের অবস্থান ও বিচারকের রায়:
মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, রাখসন্দার পরিবারিক পরিস্থিতি এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে দর্শনার্থী ভিসা (visitor’s visa) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিচারপতি অরুণ পল্লি এবং বিচারপতি রজনেশ ওসওয়ালের বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় এবং মন্তব্য করে যে, যেহেতু সরকার নিজেই তাকে ভারতে ফেরার অনুমতি দিচ্ছে, তাই তার পূর্বের আবেদনের আর কোনো প্রয়োজন নেই।
আদালত অবশ্য এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে: রাখসন্দাকে ভিসা দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই ভবিষ্যতের জন্য কোনো নীতি নির্ধারণ করবে না। এটি শুধুমাত্র একটি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে নেওয়া মানবিক পদক্ষেপ। রাখসন্দার আইনজীবীরা এই সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে জানান যে, সরকার যে পথে এগোচ্ছে, তাতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। ভবিষ্যতে তিনি চাইলে নাগরিকত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি ভিসার আবেদনের পথও তার জন্য খোলা থাকবে।
এই রায় রাখসন্দা এবং তার পরিবারের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে। জহুর আহমেদ বলেন, “গত কয়েকমাসে গোটা পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। অবশেষে কিছুটা স্বস্তি ফিরল।”