প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত আজ এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করল। বুধবার বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে আকাশ অভিমুখে গর্জে উঠল ৩,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার শক্তিশালী ব্যালিস্টিক মিসাইল ‘K-4’। ভারতের নবতম পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন ‘INS Arighaat’ থেকে এই সফল উৎক্ষেপণটি করা হয়েছে। ভারতের এই অভাবনীয় সাফল্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে রণকৌশলগত ভারসাম্য এক ধাক্কায় অনেকটা বদলে গেল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত বছর নভেম্বরে এই একই সাবমেরিন থেকে পরীক্ষার পর, বুধবারের এই দ্বিতীয় দফার সফল উৎক্ষেপণ ভারতীয় নৌসেনার শক্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিল। ‘INS Arighaat’ হলো ভারতের দ্বিতীয় ‘অরিহন্ত’ ক্লাসের পরমাণু শক্তিধর সাবমেরিন, যা নিঃশব্দে জলের তলায় দীর্ঘ সময় শত্রুর নজর এড়িয়ে থাকতে সক্ষম। এই সাবমেরিন থেকে K-4 মিসাইলের সফল প্রয়োগ ভারতকে সেই গুটিকয়েক দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে নিয়ে এল, যাদের কাছে জল, স্থল এবং আকাশ—তিন মাধ্যম থেকেই পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতা বা ‘নিউক্লিয়ার ট্রায়াড’ রয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই K-4 মিসাইল ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যস্থান পূরণ করল। আগে ভারতের কাছে ছিল ৭৫০ কিলোমিটার পাল্লার K-15 সাগরিকা মিসাইল। কিন্তু ৩,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার K-4 আসার ফলে ভারত এখন সমুদ্রের নিচ থেকেই অনেক দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাত হানতে পারবে। বিশেষ করে দূরপাল্লার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভারতের জন্য এটি এক শক্তিশালী ‘ডিটারেন্স’ বা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
জলের তলায় পরমাণু শক্তিধর সাবমেরিন খুঁজে পাওয়া শত্রুপক্ষের জন্য অত্যন্ত কঠিন। ফলে যদি কখনও স্থলভাগের পরমাণু অস্ত্রাগার লক্ষ্য করে কোনো হামলা হয়, তবে এই সাবমেরিন ও মিসাইল ভারতের ‘সেকেন্ড স্ট্রাইক’ বা পাল্টা আঘাত হানার ক্ষমতা হিসেবে কাজ করবে। ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং সমুদ্রসীমায় একাধিপত্য বজায় রাখতে ‘INS Arighaat’ এবং ‘K-4’-এর এই যুগলবন্দি আগামী দিনে গেম-চেঞ্জার হতে চলেছে।