দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ এবং পুলিশের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজনীতিতে নতুন করে আগুন লেগেছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করে তিনি এই প্রতিবাদের আহ্বান জানান। তার বিস্ফোরক অভিযোগ, মহেশতলায় হিন্দুদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে এবং একটি তুলসি মঞ্চ উপড়ে ফেলা হয়েছে, যা অশান্তির মূল কারণ।
রণক্ষেত্র মহেশতলা ও বিজেপির অভিযোগ
বুধবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল মহেশতলা এলাকা। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়, এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশও আক্রান্ত হয়। এই ঘটনার পর রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “ডায়মন্ড হারবার লোকসভার মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার মহেশতলা পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে, রবীন্দ্রনগর থানার কাছে যা হয়েছে তা পুরো পশ্চিমবঙ্গ দেখল যে কীভাবে হিন্দুদের উপর আক্রমণ হল। তুলসি মঞ্চকে তুলে ফেলে দিয়ে তুলসিমাকে অপমান করেছেন।” তার এই অভিযোগ ঘটনাটিকে একটি নির্দিষ্ট সাম্প্রদায়িক রঙ দিচ্ছে।
‘গেরুয়া পতাকা’ হাতে রাজ্যজুড়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ডাক
এই ঘটনার প্রতিবাদে শুভেন্দু অধিকারী সমস্ত পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি গেরুয়া পতাকা হাতে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ করার জন্য বিনম্র আবেদন জানিয়েছেন। তিনি তার ভিডিও বার্তায় বলেন, “তারই প্রতিবাদে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের এবং সনাতনীদের গেরুয়া পতাকা হাতে নিয়ে এই ঘটনার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ করার জন্য বিনম্র আবেদন জানাচ্ছি।” এই আহ্বানের মাধ্যমে তিনি একটি বৃহত্তর হিন্দু সমাজের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
বিধানসভায় প্রতিবাদ এবং ‘ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার’
শুভেন্দু অধিকারী আরও জানিয়েছেন যে, বিজেপি বিধায়করা বৃহস্পতিবার বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে এই ঘটনার প্রতিবাদ করবেন। বুধবারও শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা ভবানী ভবনে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। শুভেন্দু দৃঢ়ভাবে বলেন, “বিজেপি ঘরে বসে থাকবে না। সব হিন্দুদের ধুলিয়ান, শ্যামসেনগঞ্জ, মোথাবাড়ির মতো ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবে বিজেপি। হিন্দুদের বিজেপি সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেবে। বিজেপি তাদের পাশে দাঁড়াবে। এমনকি আইনি লড়াইতেও তাদের পাশে থাকবে বিজেপি। তাদের ন্যায় ও বিচার পাইয়ে দেওয়ার কাজ করবে বিজেপি। এর জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।”
তিনি সমস্ত হিন্দু সনাতনীদের পুজো কমিটি, রথ কমিটি, মন্দির কমিটি, রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনগুলিকে এই ঘটনার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
ডিজি-র সঙ্গে সাক্ষাৎ চেষ্টা, রাজ্য-রাজনীতিতে উত্তেজনা
প্রসঙ্গত, বুধবার এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শুভেন্দু অধিকারী ভবানী ভবনে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গেও দেখা করতে গিয়েছিলেন। যদিও বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, রাজ্য পুলিশের ডিজি তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। মহেশতলার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, এবং বিরোধী দল বিষয়টি নিয়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই ঘটনা আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।