আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্য রাজনীতিতে নাটকীয় মোড় নিল। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বৃহস্পতিবার (৩১শে জুলাই, ২০২৫) গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (জিজেএম) শীর্ষ নেতা বিমল গুরুং এবং রোশন গিরির সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। নিজাম প্যালেসে দীর্ঘক্ষণ ধরে এই আলোচনা চলে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। শুভেন্দু অধিকারী নিজেই তাঁর এক্স হ্যান্ডলে (পূর্বে টুইটার) সাক্ষাতের ছবি পোস্ট করে এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে পাহাড়ের এই দুই প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে শুভেন্দুর সাক্ষাৎ রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনার জন্ম দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পাহাড়ের দার্জিলিং ও কার্শিয়াং আসনে এককভাবে জয়লাভ করেছিল। অন্যদিকে, তৃণমূলের সমর্থনে লড়ে বিমল ও রোশনের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কার্যত পর্যদুস্ত হয়েছিল। তবে, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তার প্রচারে বিমল গুরুংদের সক্রিয় ভূমিকা দেখা গিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে শুভেন্দু অধিকারীর এই সাক্ষাৎকার পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একই দিনে, শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের ‘বহিরাগত’ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। গত শনিবার তমলুকে বিরোধী দলনেতা দাবি করেন যে, বিহারের মতো যদি পশ্চিমবঙ্গেও ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (SIR) পরিচালিত হয়, তবে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি মুসলিমের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে। তিনি বলেন, “বিহার যদি ৫০ লাখ বাদ যায়, তাহলে এখানে ১ কোটি ২৫ লক্ষ বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গা বাদ যাবে।”
শুভেন্দু আরও অভিযোগ করেন যে, গত ৫-৬ বছরে অনেক বাংলাদেশি মুসলিম যুবক ফেসবুকের মাধ্যমে এদেশীয় মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে বিয়ে করেছে। কেউ ভিসা নিয়ে এসে আর ফিরে যায়নি, আবার কেউ ভিসাহীন অবস্থায় এখানে বসবাস করছে। তাঁর সংযোজন, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিমদের ডোমিসাইল সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি লিখে অনুরোধ করবেন যে, এখন থেকে ইস্যু করা এই ধরনের কোনো সার্টিফিকেট যেন গ্রহণ করা না হয়।
আইপ্যাকের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ এনে শুভেন্দু বলেছেন যে, তাদের উদ্যোগে ৮টি সীমান্ত জেলায় ৭৫ হাজার বাংলাদেশি মুসলমানকে ‘ফর্ম নম্বর ৬’ (ভোটার তালিকাভুক্তির ফর্ম) দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেনে রাখুন… কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবেন না।” একই সাথে তিনি বিডিও এবং এসডিওদের সতর্ক করে বলেন, “ডোমিসাইল সার্টিফিকেট যদি আজকের দিন থেকে গ্রহণ করেন… আপনাদের কপালে দুঃখ আছে।”
শুভেন্দু অধিকারীর এই দ্বিমুখী পদক্ষেপ – একদিকে পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং অন্যদিকে ‘বহিরাগত’ ইস্যুতে কড়া অবস্থান – আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।