ভোটার লিস্ট থেকে বাদ পড়ার আতঙ্ক! SIR হিয়ারিংয়ের নোটিস পেয়েই বীরভূমে বৃদ্ধের মৃত্যু

ভোটার তালিকায় নাম সংশোধন ও যাচাইয়ের প্রক্রিয়া (SIR) এবার প্রাণ কাড়ল এক বৃদ্ধের। সন্তানদের নামে হিয়ারিংয়ের নোটিস আসার পর থেকেই তীব্র আতঙ্কে ছিলেন তিনি। সেই দুশ্চিন্তা সহ্য করতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল বীরভূমের সাঁইথিয়া থানার দক্ষিণ সৃজা গ্রামের বাসিন্দা মালেক শেখের (৬৭)। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও শোকের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মালেক শেখ পেশায় একজন পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তিনি উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে কাজ করতেন। ২০১৫ সালে বারাণসীতে তাঁর ভোটার কার্ড তৈরি হয় এবং সেখানকার তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। তবে সম্প্রতি তিনি সাঁইথিয়ার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। তাঁর দুই ছেলে— জরিফ ও সরিফ এবং মেয়ে মকিনা বিবি বীরভূমে এসআইআর-এর ফর্ম পূরণ করেছিলেন। কিন্তু গোলমাল বাধে ২০০২ সালের নথি নিয়ে।

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, যাঁদের নাম বা তাঁদের পূর্বপুরুষের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নেই, তাঁদের নথিপত্র নিয়ে হিয়ারিংয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মালেক শেখের সন্তানদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। ২০০২ সালের তালিকায় বাবার নাম না থাকায় তিন সন্তানকেই হিয়ারিংয়ে ডাকা হয়। নোটিস পাওয়ার পর থেকেই মালেক শেখ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলে দাবি পরিবারের। তাঁর আশঙ্কা ছিল, নথির অভাবে হয়তো তাঁর সন্তানদের নাম ভোটার তালিকা থেকে পাকাপাকিভাবে বাদ যাবে এবং তাঁরা নাগরিকত্ব সঙ্কটে পড়বেন।

মৃতের মেয়ে মকিনা বিবির আক্ষেপ, “বাবা সারাক্ষণ শুধু আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করতেন। হিয়ারিংয়ে কী হবে, সেই আতঙ্কই তাঁকে শেষ করে দিল।” বৃহস্পতিবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। মালেক শেখের আত্মীয়রা এই মৃত্যুর জন্য সরাসরি এসআইআর প্রক্রিয়া এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কড়াকড়িকে দায়ী করেছেন। উল্লেখ্য, এই এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্যে এমনিতেই রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে, তার মাঝেই বীরভূমের এই ঘটনা আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিল।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy