ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন পর্ব (SIR) নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখন চূড়ান্ত তৎপর। শুক্রবার ভার্চুয়াল বৈঠকে রাজ্যের সবস্তরের সংগঠনকে এই প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশ দিয়ে তিনি কার্যত তৃণমূলের সাংগঠনিক কাঠামোয় এক নতুন ‘কমান্ড সেন্টার’-এর জন্ম দিলেন।
সুত্রের খবর, এই বৈঠকে রাজ্য, জেলা ও ব্লক স্তরের হাজার হাজার নেতা ও জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। সেখানেই এই ‘অ্যাসিড টেস্ট’-এর জন্য কড়া বার্তা দেন অভিষেক।
বিজেপিকে রুখতে তৈরি 294টি ‘ওয়ার রুম’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ২৯৪টি ‘ওয়ার রুম’ খোলা হবে। এই ওয়ার রুমগুলির তদারকি করবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়করা। যেখানে বিধায়ক নেই, সেখানে দায়িত্ব সামলাবেন ব্লক সভাপতি।
💻 কঠোর নির্দেশ: প্রতিটি ওয়ার রুমে পর্যাপ্ত ল্যাপটপ, স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ এবং কম্পিউটার-অভিজ্ঞ অন্তত চার থেকে পাঁচজন কর্মী অবশ্যই রাখতে হবে।
বিএলও-র ছায়াসঙ্গী হবে তৃণমূলের বিএলএ
ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ায় ৪ নভেম্বর থেকে বুথ লেভেল আধিকারিক বা বিএলও (BLO)-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করবেন। অভিষেকের নির্দেশ, দলের বুথ স্তরের এজেন্ট বা বিএলএ-টু (BLA 2)-দের বিএলও-দের ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতে হবে।
লক্ষ্য ১০০ শতাংশ: “৯৯ শতাংশ নয়, ১০০ শতাংশ এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করার দায়িত্ব নিতে হবে বিএলএদের। একজনও প্রকৃত ভোটারের নাম যেন বাদ না-যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে,” কড়া ভাষায় নির্দেশ দেন অভিষেক।
ক্যাম্প চালু: প্রতিটি ওয়ার্ডে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্যাম্প খুলে রাখতে হবে এবং “বিএলওদের এক মিনিটের জন্যও চোখের আড়াল হতে দেওয়া যাবে না,” বলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক।
‘গাছাড়া মনোভাব চলবে না’ ও হেল্পলাইন চালু
কর্মী-নেতাদের গাফিলতি নিয়ে কঠোর বার্তা দেন অভিষেক। তিনি বলেন, “আগামী ছ’মাস আমাদের অ্যাসিড টেস্ট। এই সময়ে এক মুহূর্তের জন্যও ঢিলেমি চলবে না। বিএলএ-র কাজ হল বিএলও-র ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকা।”
এদিকে, ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়ায় সমস্যায় পড়লে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য দলের তরফে এদিন একটি বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর (8142681426) চালু করা হয়েছে।
‘ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই’, উদ্বেগের আবহ
তৃণমূলের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে পরিকল্পিতভাবে বাংলার প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দিতে চাইছে।
এই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “এই লড়াইটা ভোটের নয়, ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই।” ইতিমধ্যে আগরপাড়া, ইলামবাজার, দিনহাটা ও টিটাগড়ে এসআইআর আতঙ্ক থেকে কয়েকজনের মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে বলে তৃণমূল অভিযোগ করেছে। কর্মীদের উদ্দেশে অভিষেকের স্পষ্ট বার্তা, “মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে দেবেন না। প্রতিটি এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।”