পরিচালক অনীক দত্তর জনপ্রিয় সিনেমা ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এ ভূতেদের আস্তানা হিসেবে যে বাড়িটিকে দেখানো হয়েছিল, সেটিই হলো হুগলির শ্রীরামপুরের সুবিশাল গোস্বামী বাড়ি। শ্রীরামপুর রাজবাড়ি নামেও পরিচিত প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন এই বাড়ির দুর্গাপূজা স্থানীয়ভাবে ‘বুড়িমার দুর্গা’ নামে পরিচিত।
ঐতিহ্য ও পুজোর রীতিনীতি
গোস্বামী বাড়ির দুর্গাপূজা হয় বৈষ্ণব রীতিতে, যেখানে দেবী দশভুজার আরাধনা করা হয়। আজও এই বাড়ির ঠাকুর দালানে এক চালার ঠাকুর পুজো পান। একসময় এই পুজোকে ঘিরে চারদিন ধরে ভিয়েন বসত এবং রাতভর চলত পালা গানের আসর। সময়ের সঙ্গে সেই জৌলুস কিছুটা কমলেও, ঐতিহ্যে কোনো খামতি নেই। কুমারী পুজো থেকে শুরু করে সন্ধিপূজো—সব নিয়ম-নিষ্ঠা মেনেই পালিত হয়।
একটি বিশেষ প্রথা হলো, দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন হলেও, কাঠামোটি বছর বছর রেখে দেওয়া হয়।
অট্টালিকা তৈরির নেপথ্যের ইতিহাস
এই সুবিশাল অট্টালিকা তৈরির পিছনে রয়েছে নবাব আলিবর্দি খাঁর শাসনকালের এক ঐতিহাসিক পটভূমি। পরিবারের পূর্বপুরুষ রাম গোবিন্দ গোস্বামী একদিন গঙ্গাবক্ষে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় তাঁর স্ত্রী মনোরমা দেবীর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় তিনি শ্রীরামপুরে থামতে বাধ্য হন। এই জায়গা তাঁর এতটাই পছন্দ হয় যে তিনি এখানে বসতি স্থাপন করেন। সেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায় তাঁকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। রাম গোবিন্দ এখানেই দুর্গাপূজা শুরু করেন, যা ‘বড় বাড়ি’ নামে পরিচিত হয়।
পরবর্তীকালে, রাম গোবিন্দর নাতি হরিনারায়ণ গোস্বামীর আমলে পরিবার ভাগ হলে তিনি ও তাঁর পুত্র রঘুরাম গোস্বামী চাতরায় বিশাল অট্টালিকা তৈরি করেন এবং বিরাট নাটমন্দির ও ঠাকুর দালান তৈরি করে সেখানে নতুন করে দুর্গাপূজা শুরু করেন।
প্রবাসীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ
বর্তমানে, পরিবারের অনেকেই কাজের সূত্রে বিদেশে থাকেন। কিন্তু পুজোর সময় সবাই নিজের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করেন। যাঁরা আসতে পারেন না, তাঁদের জন্য প্রতি বছর গোস্বামী বাড়ির ফেসবুক পেজ থেকে পুজোর সব লাইভ ভিডিও ব্রডকাস্ট করা হয়, যাতে দূর থেকেও আপনজনেরা পুজোর আনন্দ অনুভব করতে পারেন।
বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা জানান, দালান রক্ষণাবেক্ষণ করা ক্রমশ সমস্যা হয়ে দাঁড়ালেও, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।