“ভুটানের জলেই ক্ষতি, ওরাই ক্ষতিপূরণ দিক!”-বিপর্যস্ত নাগরাকাটায় দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন মমতা

উত্তরবঙ্গে অতিবৃষ্টি ও ধসে সৃষ্ট ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য ভুটানকে সরাসরি দায়ী করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট দাবি, ভুটান থেকে আসা জলেই এত বড় বিপত্তি ঘটেছে, তাই এই ক্ষতির ক্ষতিপূরণ ভুটানকেই দিতে হবে।

ত্রাণ কাজ তদারকিতে সোমবার বৃষ্টি-ধসে বিপর্যস্ত নাগরাকাটার বামনডাঙা আদর্শ গ্রামে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের পাশে থাকার সমস্ত আশ্বাস দেন তিনি। দুর্যোগে প্রিয়জনকে হারানো সাতটি পরিবারের সদস্যদের হাতে চাকরির কাগজপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

গত ৪ অক্টোবর অতিবৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে নাগরাকাটার বামনডাঙা, যা ডায়না ও খাটিয়া নদীর জলে প্লাবিত হয়েছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফের দাবি করেন, এই বিপর্যয়ের মূল কারণ ভুটান থেকে আসা জল।

তিনি বলেন, “ভুটানের জলেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেক দিন ধরে ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন তৈরির কথা বলে আসছি। তাতে বাংলাকেও রাখা হোক। আমাদের চাপে ১৬ তারিখ একটা মিটিং হচ্ছে জানতে পেরেছি। আমরা একজন প্রতিনিধি পাঠাব। কিন্তু, ভুটানের কারণেই যখন এত বড় ঘটনা ঘটেছে, তখন ওরাই ক্ষতিপূরণ দিক। দিল্লি তো কিছু করে না। সবটাই আমাদের করতে হয়।”

একইসঙ্গে, ভুটান থেকে জলের সঙ্গে ভেসে আসা ডলোমাইট নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জল ছাড়লে বলে ছাড়বে তো। জলের সঙ্গে ডলোমাইটও আসছে। তাতেই আরও ক্ষতি বাড়ছে। ওই ডলোমাইটের ধাক্কায় বাড়িগুলো আরও ভেঙে যাচ্ছে।” স্থানীয় প্রশাসনকে তিনি দ্রুত নদীর জলে ভেসে আসা ডলোমাইট তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয়দের আশ্বাস দেন, “কোনও চিন্তা নেই। যাঁদের বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। শিবির তৈরি করা হয়েছে, সেখানে গিয়ে নাম লেখান। গোরু-ছাগল হারালেও নাম লেখান। প্রশাসন সাহায্যের জন্য রয়েছে। আপাতত নদীর উপর অস্থায়ী সেতু গড়ে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সব ঠিক করে দেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, এই দুর্যোগে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার-সহ বহু জেলায় মানুষের আধার কার্ড, রেশন কার্ড-সহ দরকারি নথি নষ্ট হয়েছে। দুর্গতদের হাতে দ্রুত এই নথিপত্র পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রী রবিবারই ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান প্রকল্পে’র সময়সীমা এই অঞ্চলগুলিতে বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। এর আগে গত সোমবার তিনি নাগরাকাটার লুকসান এলাকায় ভেঙে পড়া কালীখোলা সেতুর সামনে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করেন, যেটি যুদ্ধকালীন তত্পরতায় মেরামত করা হয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy