লোকসভা নির্বাচনের ভোট কারচুপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। শুক্রবার সংসদ চত্বরে কমিশনের বিরুদ্ধে ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ তোলার পর শনিবার তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে দাবি করলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থারই ‘মৃত্যু’ হয়েছে এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বড় ধরনের কারচুপি করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই কারচুপির ‘অ্যাটম বোমার মতো প্রমাণ’ জনসমক্ষে আনার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
আজ ‘কনস্টিটিউশনাল চ্যালেঞ্জেস: পার্সপেক্টিভ অ্যান্ড পাথওয়েজ’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। ভরা সভাঘরে তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খুব সামান্য ব্যবধানে তার চেয়ারে আসীন রয়েছেন। যদি ১০-১৫টি আসনে কারচুপি হয়ে থাকত – যদিও তার সন্দেহ প্রকৃত সংখ্যাটা ৭০-৮০ থেকে ১০০ – তাহলে তিনি আর দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না।
কর্ণাটকের ভুয়ো ভোটারের তথ্য পেশ:
নিজের দাবির সপক্ষে রাহুল গান্ধী কর্ণাটকের একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, কংগ্রেস ওই কেন্দ্রের ভোটারদের নাম ও ছবি অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছে যে, ৬.৫ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ১.৫ লক্ষ ভোটারই ভুয়ো। রায়বরেলির সাংসদ রাহুল বলেন, “আমরা এই তথ্য প্রকাশ করার পর আপনারা দেখবেন, ভোট ব্যবস্থা কীভাবে ধাক্কা খায়। এটা আক্ষরিক অর্থে অ্যাটম বোমা।”
তিনি আরও বলেন, “সত্যিটা হলো, ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার মৃত্যু হয়ে গিয়েছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে আমরা আপনাদের কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে দেব, কীভাবে লোকসভা ভোটে কারচুপি করা সম্ভব এবং সেটাই করা হয়েছে।”
নির্বাচন কমিশনকে ‘দখল’ করার অভিযোগ:
কমিশনের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শানিয়ে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “এটা পরিষ্কার, যে প্রতিষ্ঠান সংবিধানকে রক্ষা করে সেই প্রতিষ্ঠানটি আর নেই, তাকে দখল করা হয়েছে।” রাহুল দাবি করেন, এর আগে তার কাছে এই প্রমাণ ছিল না বলেই তিনি এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ আগে করতে পারেননি।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা তার এই বিবৃতির বিষয়ে সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, “আমি আমার এই বিবৃতির বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী, কারণ আমার কাছে একশো শতাংশ প্রমাণ আছে।” ২০১৪ সাল থেকেই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে তার সন্দেহ ছিল বলে রাহুল জানান। বিশেষ করে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচন, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের একটিও আসনে জয়ী না হওয়া তাকে অবাক করেছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
যদিও নির্বাচন কমিশন গতকালই রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে, তবে কংগ্রেসের এই নতুন অভিযোগ এবং ‘প্রমাণ’ পেশের হুঁশিয়ারি দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনে এই ‘অ্যাটম বোমা’ কী ধরনের প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।