ভারতের উপর ২৫%, বাংলাদেশ-পাকিস্তানকে ‘সুবিধা’-ট্রাম্পের কূটনৈতিক চাল নাকি অন্যকিছু?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা বিশ্ব বাণিজ্য মহলে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে। তবে একই সময়ে ভারতের একাধিক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ওপর তুলনায় কম অঙ্কের শুল্ক চাপিয়ে আমেরিকা এক ভিন্ন বার্তা দিয়েছে, যা কূটনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য ‘সুবিধা’:

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক নীতিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলি ভারতের তুলনায় কম শুল্কের সুবিধা পাবে। যেখানে ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের পণ্যে ২০%, পাকিস্তানের পণ্যে ১৯%, আফগানিস্তানের পণ্যে ১৫% এবং শ্রীলঙ্কার পণ্যে ২০% শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য:

বাংলাদেশের পণ্যে ট্রাম্পের ২০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার বিষয়টি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। গত ২ এপ্রিল প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা জানানো হয়েছিল, যা জুলাই মাসে ৩৫ শতাংশে নেমে আসে। এখন তা আরও ১৫ শতাংশ কমে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার তিনি বলেন, “এটি সুস্পষ্ট এক কূটনৈতিক সাফল্য। শুল্কহার ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে আরোপিত শুল্ক হারের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আমাদের আলোচকেরা অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার বিষয়ে অবিচল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন।”

পাকিস্তানের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ ও ট্রাম্পের দাবি:

অন্যদিকে, পাকিস্তানের পণ্যে ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে ২৯ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করলেও, ৩১শে জুলাই তা ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের পণ্যে ৬ শতাংশ কম হারে শুল্ক চাপাবে আমেরিকা। এর পাশাপাশি ট্রাম্প আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য চুক্তির দাবিও করেন এবং পাকিস্তানে ‘তেল ভান্ডার’ গড়ে তোলার কথাও জানান। যদিও বাস্তব চিত্র হলো, পাকিস্তান প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের সিংহভাগই অন্য দেশ থেকে আমদানি করে।

বিশেষজ্ঞদের মত: ভারতকে চাপে রাখার কৌশল?

বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, ভারতের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে এবং একই সাথে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিকে তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক সুবিধা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চাপে রাখার কৌশল অবলম্বন করছে। বিশেষ করে, পাকিস্তানের কথিত ‘তেল ভান্ডার’ নিয়ে ট্রাম্পের উচ্চাকাঙ্ক্ষী মন্তব্যকে অনেকে ভারতকে লক্ষ্য করে এক ধরনের কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির প্রয়াস হিসেবে দেখছেন। এই শুল্ক নীতির ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন করে মেরুকরণ দেখা যেতে পারে এবং ভারতের ওপর এর অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy