“ভাগবতকে গ্রেফতার নির্দেশ ছিল”-মালেগাঁও বিস্ফোরণ নিয়ে বিস্ফোরক দাবি প্রাক্তন এটিএস অফিসারের

২০০৮ সালের মালেগাঁও বোমা বিস্ফোরণ মামলার সাত অভিযুক্তকেই গতকাল, বৃহস্পতিবার, এনআইএ বিশেষ আদালত নির্দোষ ঘোষণা করেছে। এই রায়ের পর এই মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা তৎকালীন এটিএস অফিসার মেহবুব মুজাওয়ার একটি বিস্ফোরক দাবি করেছেন, যা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

আজতকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে অবসরপ্রাপ্ত এটিএস অফিসার মেহবুব মুজাওয়ার বলেন যে, মালেগাঁও বিস্ফোরণের পর তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার পরমবীর সিং তাঁকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুজাওয়ারের দাবি, দেশে ‘গেরুয়া সন্ত্রাসবাদ’ এর ধারণা প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁকে ভুল তদন্ত করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি এর বিরোধিতা করেছিলাম, কারণ আমি কোনো ভুল করতে চাইনি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যদিও এই সমস্ত মামলায় আমাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।”

মুজাওয়ার আরও অভিযোগ করেন, “তারা আমাকে চার্জশিটে মৃত ব্যক্তিদের জীবিত ঘোষণা করার জন্য চাপ দিয়েছিল। আমি সেটা করতে অস্বীকার করি। আর তখনই তৎকালীন আইপিএস অফিসার পরমবীর সিং আমাকে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেন।” তবে মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় আদালতের সিদ্ধান্তে তিনি খুশি বলে জানান মুজাওয়ার।

আদালতের রায়ে কী বলা হয়েছে?

২০০৮ সালের মালেগাঁও বোমা বিস্ফোরণ মামলায় সকল অভিযুক্তকে খালাস দেওয়ার সময় আদালত জানিয়েছে যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এবং বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী নেই। বিচারপতি লাহোটি রায়ে লিখেছেন যে, প্রসিকিউশন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এবং বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী পেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কেবল বর্ণনার ভিত্তিতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।

বিচারপতি এ কে লাহোটি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন যে, সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই, কারণ কোনো ধর্মই হিংসাকে সমর্থন করে না। তিনি আরও বলেন, কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে মামলাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এবং প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত বলেছে যে, কর্নেল পুরোহিত আরডিএক্স এনেছিলেন বা বোমা তৈরি করেছিলেন, কিংবা অপরাধে ব্যবহৃত বাইকটি সাধ্বী প্রজ্ঞার ছিল, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রেকর্ডে নেই। ঘটনার পরে কে পাথর ছুঁড়েছিল এবং কে পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে নিয়েছিল তারও কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

২০০৮ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর মালেগাঁওয়ের ভিকু চকে একটি দু’চাকার গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত এবং ১০১ জন আহত হয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ফারহিন ওরফে শাগুফতা শেখ লিয়াকত, শেখ মুশতাক ইউসুফ, শেখ রফিক মুস্তাফা, ইরফান জিয়াউল্লাহ খান, সৈয়দ আজহার সৈয়দ নিসার এবং হারুন শাহ মোহাম্মদ শাহ। এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিত, সুধাকর চতুর্বেদী, এবং অবসরপ্রাপ্ত রমেশ উপাধ্যায়। আদালতের এই রায় এবং প্রাক্তন এটিএস অফিসারের বিস্ফোরক দাবি ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা ও তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy